মালদা, 17 মে: ভোট মিটেছে ৷ ওঁদের প্রয়োজনও তাই ফুরিয়েছে ৷ ভোট শেষ হতেই তাই বন্ধ হয়েছে খাবার, বিদ্যুতের সংযোগ ৷ নেতা-মন্ত্রীদের সময় নেই, প্রয়োজন নেই সরকারি কর্তাদেরও ৷ সবার কাছেই তাঁরা যেন 'উটকো আপদ' ৷ তাই কাঠফাটা গরমে গনগনে ত্রিপলের নীচেই ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা ৷
এই মানুষগুলি রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ৷ গত 1 মে'র দুপুরে আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল এখানকার প্রায় 70টি পরিবারের সর্বস্ব ৷ আগুন সেদিনই নিভে গিয়েছে ৷ কিন্তু তার দগদগে ঘা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মানুষ ৷ সেদিন চোখের সামনে ছাই হতে দেখেছিলেন ঘরের যাবতীয় কিছু ৷ সেই খবর চাউর হতেই যেন দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ৷ কে আগে দুর্গতদের কাছে পৌঁছোবে, পাশে থাকার বার্তা দেবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল তৎপরতা ৷ ভোটের মুখে অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত পরিবারগুলি যাতে ভোটদান থেকে সরে না যায়, তার জন্য তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছিল ৷ ব্লক প্রশাসনের তরফে দুর্গতদের খাবার দেওয়া শুরু হয়, দেওয়া হয়েছিল অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ ৷ সব কাজই হয়েছিল চোখের পলকে ৷
কিন্তু 7 মে ভোট মিটতেই রাজনীতি ও প্রশাসনের দু'মুখো নীতি দেখতে পাচ্ছেন একসময় গঙ্গা ভাঙনে ভিটেছাড়া জঞ্জালিটোলার বাসিন্দারা ৷ তাঁরাই বলরামপুরে অস্থায়ী বসতি নির্মাণ করেছেন ৷ তাঁদের একজন সুকুমার মণ্ডল বলেন, "আমাদের আর কিছুই নেই ৷ সব হারিয়ে ত্রিপলের নীচে বসবাস করছি ৷ ভোটের আগে আগুন লাগার পর সবাই এসেছিল ৷ নেতা-মন্ত্রী তো বটেই, এসেছিলেন বিডিও নিজেও ৷ তাঁরা আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷ বিডিও নিজে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন ৷ বিদ্যুতের ব্যবস্থাও হয়েছিল ৷ কিন্তু ভোটের পরদিন থেকে সব বন্ধ ৷ বিদ্যুৎ সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছে ৷ পরবর্তীতে কেউ আসেনি, কেউ খোঁজও নেয়নি ৷ কোনওরকমে ভোটটা দিয়েছি ৷ লাইট-ফ্যান নেই ৷ এই গরমে ত্রিপলের নীচে থাকা যায় না ৷ তাই মাঝেমধ্যে ত্রিপলের নীচ থেকে বেরিয়ে এসে গাছতলায় বসতে হচ্ছে ৷"