কলকাতা, 15 জানুয়ারি:বাঘাযতীনের বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়ল কলকাতা পুরনিগমে । ওই রিপোর্টে ঘটনার জন্য লিফটিং সংস্থাকেই মূলত কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর ।
মঙ্গলবার কলকাতার বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর এলাকায় একটি চারতলা ফ্ল্যাট হেলে নিচতলার অংশ ভেঙে যায় ৷ পাশাপাশি উপড়ে আসে ভিতের একাংশ । গতকালই ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের ডিজি উজ্জ্বল রায়ের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ারদের একটি প্রতিনিধি দল । তারা সরজমিনে ঘটনার তদন্তের পর প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে ৷
সরজমিনে ঘটনার তদন্তে পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা (নিজস্ব ছবি) কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টে মূল যে বিষয়টি বলা হয়েছে তা হল, ওই অ্যাপার্টমেন্টটি আগেই হেলে গিয়েছিল ৷ সেটি লিফটিংয়ের কাজের জন্য কোনও অনুমতি চেয়ে কলকাতা পুরনিগমের কাছে আবেদন করা হয়নি । হরিয়ানার যে সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছিল তাদের গাফিলতির কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারীরা ।
ইঞ্জিনিয়াররা তদন্তে জানতে পেরেছেন, লিফটিং করার কাজ করছিলেন মিস্ত্রিরা । সেই সময় কাজের জায়গায় কোনও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না । কোনও ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ না নিয়েই এই কাজ হচ্ছিল । তাই অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর জেরেই এই পরিণতি বলে মনে করছেন পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা । এছাড়াও তদন্তে উঠে এসেছে, বাড়িটি একদিকে সামান্য হেলে গেলেও উপরের দিকে কোনওরকম ক্র্যাক বা ফাটল হয়নি । কেবল নিচতলা ভেঙেছে ৷ তাছাড়া বাকি বাড়ির অংশ একইরকম রয়েছে ৷
পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা মনে করছেন, জলাভূমি ভরাট করে তার উপর বহুতল হলে এই ধরনের ডিফারেন্সিয়াল মেজারমেন্ট হয়ে থাকে ৷ সম্পূর্ণ বাড়িটি ভেঙে পাথরঘাটায় পুরনিগমের কংক্রিট ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । বাড়িটি লিফটিং না করা হলেও অদূর ভবিষ্যতে কোনও ক্ষতি হত না বলেও মনে করছেন তদন্তকারী ইঞ্জিনিয়াররা । নরম মাটির উপর নির্মাণ হলে অনেক ক্ষেত্রেই মাটির ভঙ্গুর বা ধসের কারণে বাড়ি হেলে (এই ঘটনাকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ভাষায় সেটেলমেন্ট বলে) যায় । এরকম অবস্থায় সেই বাড়ি থাকলেও কোন কাঠামোর ক্ষতি হয় না । কলকাতায় এরকম বাড়ি অনেক রয়েছে ।
বাঘাযতীনে হেলে যাওয়া ফ্ল্যাট (নিজস্ব ছবি) 2010 সালে বাঘাযতীনের হেলে পড়া বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু হয় । 15 বছরের এই বাড়িটির সামগ্রী এখনও শক্তপোক্ত রয়েছে বলেই মনে করছেন পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা । জানা গিয়েছে, বাড়িটি সামান্য হেলে ছিল এবং অল্প বৃষ্টিতেই ওই এলাকায় জল জমে যায়, এই দুই সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রমোটারকে বলেন বাসিন্দারা । বাড়িটি লিফটিং করলে সমস্যা সমাধান হতে পারে ভেবেই প্রোমোটার হরিয়ানার একটি সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ করছিলেন । আর তাতেই ঘটে বিপত্তি ।
যদিও এই বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিকরা প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চাননি । এলাকার বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার বলেন, "বামফ্রন্ট আমলে 90 দশকের শেষের দিকে রাজ্য বিধানসভায় বিল এনে বলা হয়েছিল, কলোনি এলাকার বাসিন্দারা বাড়ির নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করলে তাদের রেগুলারাইজ করে দেওয়া হবে । তবে হরিয়ানার যমুনা নগরের যে কোম্পানি কাজটা করছে, সেটার কোনও অনুমতি পুরনিগমের থেকে নেওয়া হয়নি । 8টি ফ্ল্যাটের মালিক বাড়িটি সোজা করার অনুমতি দিয়েছেন ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছি পুরনিগম, কাউন্সিলর বা অন্য কাউকে জানাননি কেন ? কেউ উত্তর দিতে পারছেন না । বলছেন প্রোমোটার চাপ দিয়েছে ।"