কলকাতা, 2 ফেব্রুয়ারি: বছর চারেক আগে কুঁদঘাটের ভয়ালো স্মৃতি ফিরল বানতলায়। নিকাশি নালায় নেমে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য। এবার বানতলার কাজের প্রক্রিয়া নিয়েই একাধিক প্রশ্ন তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাল কলকাতা কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের দাবি, এই ধরনের কাজ করতে হলে বেশ কিছু সুরক্ষাবিধির মানতে হয়। কোনও ফাঁক থেকে গেলেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যায় ৷
কী সেই নিয়ম?
এই ধরনের কাজ করতে হলে প্রথমত দরকার একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার। ম্যানহোলে মানুষ নামা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বারণ। তবুও এই ধরনের লাইন তৈরি করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে কাউকে না কাউকে নামতেই হয়। এক্ষেত্রে যে ম্যানহোল শ্রমিকরা নামবেন তার আগে ও পরের দুই থেকে চারটি ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা রাখতে হবে।
গ্যাস সম্পূর্ণ বেরিয়ে গিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রথমে গন্ধ বেরচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপর ল্যাম্প টেস্ট করতে হবে। নীচে কোথাও গ্যাস থাকলে বা অক্সিজেন পর্যাপ্ত না থাকলে সেই ল্যাম্প নিভে যাবে। এই দুটি পরীক্ষার পর যে সমস্ত শ্রমিকদের নীচে নামানো হবে তাঁদের সুরক্ষা পোশাক বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে। মাস্ক থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকাও বাধ্যতামূলক।
একই সঙ্গে তারা আরও জানাচ্ছে, প্রত্যেকের কোমরে অবশ্যই দড়ি বাঁধা থাকবে। কোনও কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যাঁতে দ্রুত বাকিরা তাঁকে উদ্ধার করতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা থাকা দরকার। সাইট ইঞ্জিনিয়ার সমস্ত পরীক্ষা করে, সবুজ সংকেত দিলে তবেই শ্রমিকরা নীচে নামবেন। নীচে যতক্ষণ শ্রমিকরা কাজকর্ম করবেন ততক্ষণ ম্যানহোলের মুখে একজনকে রাখতে হবে । তিনি নজর রাখবেন। এই সমস্ত পদ্ধতি ভালোভাবে মানা হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। অতীতে কুদঘাটেও এই পদ্ধতি না অনুসরণ করে নীচে নামাতেই বিপদের মুখে পড়তে হয়েছিল শ্রমিকদের। একইভাবে এখানেও বিপদের মুখে পড়তে হল ৷
সংগঠনের বক্তব্য
কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেন, "কলকাতা কর্পোরেশন বা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এই ধরনের কাজ করানোর আগে কয়েকটি আগাম ব্যবস্থা নিয়ে রাখে। প্রথমেই যে সংস্থার কর্মীদের ম্যানহোল নামানো হচ্ছে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে রাখে। পাশাপাশি সুরক্ষার দিকটি ভালোভাবে মানা হচ্ছে কিনা দেখতে একজন ইঞ্জিনয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যারা এই টেন্ডারগুলি নেন কাজের অনেকেই সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাখেন না। আবার থাকলেও তারা সঠিকভাবে নিজেদের দায় দায়িত্ব পালন করে না।"
কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন নগর পরিকল্পক দীপঙ্কর সিনহা বলেন, "গ্রাম বাংলার গরীব মানুষ শ্রমিক হিসেবে এই কাজগুলি করে থাকেন। তাঁরা এই সুরক্ষা-পোশাক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংস্থার তরফে পান না। পাশাপাশি অধিকাংশ শ্রমিককেই এই বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হয় না। "