কলকাতা, 13 অক্টোবর: এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি সরগরম জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন এবং সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের গণ ইস্তফা নিয়ে। রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের একাংশের সমর্থনও রয়েছে তাঁদের সঙ্গে।
এই অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তার এবং সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে আসরে নামলেন অপর্ণা সেন, পরমব্রত-সহ বিদ্বজনদের একাংশ। তবে তাঁদের এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, নাগরিক সমাজের সক্রিয়তার উপর ভরসা রেখে অনশন তোলার জায়গায় তাঁরা নেই। তবে তাঁরা আলোচনার জন্য। পাশাপাশি বিদ্বজনরা চাইলে তাঁদের দাবি নিয়ে সরকারের দ্বারস্থ হতে পারেন বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।
বিদ্বজনদের এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেনও কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "তদন্ত করছে সিবিআই, বিচার করছে আদালত। এই অবস্থায় সরকার কী করবে সেটা সরকারের বিষয়। আমার মনে হয় মধ্যস্থতা করার কিছু নেই। সরকার বারবার জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন না করে যাতে কাজে ফিরে যান সেটা জুনিয়র ডাক্তারদের বোঝানো দরকার।"
রবিবার রাজ্য সরকার এবং জুনিয়র ডাক্তার-উভয়পক্ষকেই মেইল করে বিদ্বজনদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দু'পক্ষ চাইলে তাঁরা মধ্যস্থতায় রাজি । এদিন যে মেইলের অংশ জনসমক্ষে এসেছে তাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের নাম রয়েছে। আর এই মেইল যাঁরা পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন অপর্ণা সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, সুজাত ভদ্র, রত্নাবলী রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টরা।
আরজি করের নির্যাতিতার বিচার-সহ একাধিক দাবিতে লাগাতার ধর্মতলায় অনশন করছেন জুনিয়ার ডাক্তারা। রবিবার সেই অনশনের অষ্টম দিন। এই অবস্থায় যে কোনও চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। সেখান থেকে অপর্ণা সেন-সহ বিশিষ্ট জনদের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহলমহল।
বিশিষ্টজনদের মেইলের যে অংশ সামনে এসেছে তাতে লেখা হয়েছে, "গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি সরকার এবং আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বৈঠকের ফলাফল এক জটিল, অনভিপ্রেত অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। যাঁরা অনশন করছেন তাঁদের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছে ৷ সেই কারণে সমগ্র নাগরিক সমাজ গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সরকার চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবির ন্যায্যতা স্বীকার করেছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে সংশয় আছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা ডাক্তারদের অনশনের মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। এই আর্জি ডাক্তারদের একার নয়, বৃহত্তর নাগরিক সমাজেরও।"
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে এখানে বলা হয়েছে, "আপনারা পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের এক নতুন পথ খুলে দিয়েছেন। আপনাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সুস্থ থাকুন। দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বার্থে তা একান্ত প্রয়োজন। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই যাতে সুস্থ আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের ন্যায্য দাবীগুলির সমাধান এবং বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব হয়। এই প্রক্রিয়ায় আমরা যথাসাধ্য সক্রিয় থাকব।"
এখানেই শেষ নয়, এই মেইলে তাঁরা লিখেছেন, "প্রশাসন এবং আন্দোলনরত চিকিৎসক সমাজ উভয় পক্ষকে জানাতে চাই, এই সমস্যা নিরসনে এবং দুই পক্ষের মধ্যে একটি নতুন সংলাপের সেতু গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে কি না, সেটা যদি তারা জানায় তাহলে বিদ্বজনরা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন" এরপর, সরকার এবং জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে বিশিষ্ট জনেদের এই উদ্যোগকে আদৌ স্বীকৃতি দেওয়া হয় কি না, সেটাই দেখার।