কামারহাটি, 29 সেপ্টেম্বর:আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করতে রবিবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কিন্তু সেখানে তাঁকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসকরা। চলে বিক্ষোভও। শুধু তাই নয়, প্রদেশ কংগ্রেসের নয়া সভাপতির উদ্দেশ্যে 'গো-ব্যাক' স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই আন্দোলন নিয়ে কোনওরকম রাজনীতি তাঁরা চান না। কিছুক্ষণ হাসপাতালে থাকার পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান শুভঙ্কর-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা।
যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র ডাক্তারদের প্রতিবাদকে সমর্থন করতে। তাঁর দাবি, কোনও 'গো-ব্যাক' স্লোগান দেওয়া হয়নি তাঁকে। তবে, রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় তাঁকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা ৷ মাইক হাতে নিয়ে আন্দোলনকারীদের বলতে শোনা যায়, যাঁরা এই মঞ্চকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন, তাঁদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ, ফিরে যান। 'গো-ব্যাক।'
এই আন্দোলন নিয়ে কোনওরকম রাজনীতি তাঁরা চান না, জুনিয়র চিকিৎসকরা (ইটিভি ভারত) চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিগ্রহকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত থেকে উত্তপ্ত কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেদিন রাতে এক রোগীর মৃত্যুর পরই তাঁর আত্মীয়রা হাসপাতালের চারতলায় উঠে ডাক্তার ও নার্সদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও সেদিন এক পুলিশকর্মী-সহ মোট 7 জন আহত হয়েছিলেন। এই ঘটনার পর শুক্রবার রাত থেকেই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন।
চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তাররা। শুধু তাঁরাই নন, পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের প্রতিনিধিরাও সেখানে গিয়ে সোমবারের মধ্যে নিরাপত্তার সুরাহা না-হলে ফের কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যজুড়ে। এই আবহেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে রবিবার সাগর দত্ত হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি। কিন্তু, তা সুখকর হল না শুভঙ্কর সরকারের।
এবিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা কেউ অরাজনৈতিক নই। প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু সে সব পরিচয় বাইরে রেখে মানুষের স্বার্থে মানুষ হিসেবে আমরা এখানে এসেছি। জেলা কংগ্রেসের পরিচয় নিয়ে আসিনি।" ডাক্তারদের 'গো ব্যাক' স্লোগান প্রসঙ্গে শুভঙ্কর বলেন, "ওঁরা আমাদের গো-ব্যাক বলেননি। আমি গিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। পতাকা না-নিয়ে আসার জন্য ওঁরা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু বলেছেন, যেহেতু আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে তাই আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে। রাজ্যে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ করা প্রয়োজন। হাসপাতালের অব্যবস্থার জন্য সরকারই দায়ী।"
এদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হল। হাসপাতালের আউটপোস্টে বাড়ানো হয়েছে পুলিশকর্মীর সংখ্যা। আগে 28 জন পুলিশকর্মী ছিলেন, রবিবার থেকে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 40। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় নতুন সিসি ক্যামেরাও বসেছে ।