হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফেরাতে চাঁদা আদায় মুসলমানদের মালদা, 20 ফেব্রুয়ারি: বর্ধিষ্ণু গ্রাম ৷ প্রায় তিনশো বাড়ি ৷ মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৷ গ্রামে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা মেরেকেটে 15টি ৷ সেই গ্রামই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় উ
দাহরণ তৈরি করেছে ৷ হিন্দু পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফেরাতে চাঁদা আদায় করল মুসলমান পরিবারগুলি ৷ গ্রামবাসীদের এই কাজের জন্য তাদের কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা জেলা ৷
গ্রামের নাম বালুভরাট ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের আরও অনেক গ্রামের মতোই সাদামাটা ৷ গ্রামবাসীদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ৷ শ্রমিকের কাজ করেন ৷ সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিক ৷ এই গ্রামেরই আরও অনেকের সঙ্গে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন 44 বছর বয়সি তুফানু মহালদার ৷ নির্মাণ সহায়কের কাজ করেন তিনি ৷ 7-8 মাস ধরে দিল্লির কর্মস্থলেই ছিলেন ৷ সঙ্গে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী পুষিয়া মহালদার ও ছেলে নিখিল ৷ শনিবার কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তুফানু ৷ সহকর্মীরা তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ মৃত্যু হয় তাঁর ৷
এরপরেই তুফানুর পরিবারের সদস্যদের মাথায় নেমে আসে আরেক চিন্তা ৷ গ্রামে শুধুমাত্র একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁর ৷ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও নেহাতই গরিব ৷ এদিকে দিল্লি থেকে দেহ ফিরিয়ে আনতে হবে ভিটেয় ৷ দেহ ফিরিয়ে আনতে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া গুনতে হবে 50 হাজার টাকা ৷ এত টাকা তাঁরা পাবেন কোথায়? এই পরিস্থিতিতে মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়ায় গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায় ৷ তুফানুর দেহ ফিরিয়ে আনতে তাঁরা চাঁদা তুলতে নেমে পড়েন ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই 50 হাজার টাকা চাঁদা উঠে আসে ৷ সেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তুফানুর এক সহকর্মীর কাছে ৷ সোমবার রাতেই দেহ গ্রামে ফিরে আসছে ৷
এক গ্রামবাসী প্রহ্লাদচন্দ্র চৌধুরী জানান, গ্রামে তুফানুর কিছুই নেই ৷ পেটের দায়ে দিল্লিতে নির্মাণ সহায়কের কাজ করতে গিয়েছিলেন ৷ কাজ করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল ৷ সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কিন্তু ওঁকে বাঁচানো যায়নি ৷ ওঁর স্ত্রী আর ছেলেও দিল্লিতে ছিলেন ৷ পরিবারে তুফানুই একমাত্র উপার্জন করত ৷ এখানে শুধুমাত্র চারটা টিন দেওয়া একটা ঘর ছাড়া ওদের আর কিছু নেই ৷ সংসার চালাতে 10-15 বছর ধরেই ও বাইরে কাজ করতেন ৷ এই গ্রামে 12-13 ঘরই হিন্দু রয়েছে ৷ গ্রামের মুসলমানরাও ওঁর দেহ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন ৷ দিল্লিতে তুফানুর মুসলমান সহকর্মীরাও খুব সাহায্য করছে ৷ সবাই মিলেই ওই দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷
স্থানীয় বাসিন্দা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জুর আলম বলেন, "আমরা গ্রামের সবাই চাঁদা তুলে তুফানুর দেহ ঘরে ফিরিয়ে আনছি ৷ দিল্লিতে এখানকার যত লোক রয়েছে, তারাও সাহায্য করছে ৷ ওঁর পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ ৷ খাবারও জোটে না ৷ এই গ্রামে আমরা হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে থাকি ৷ গ্রামে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা খুবই কম ৷ তাই আপদে বিপদে আমরা তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই ৷ তুফানুর পরিবারকে কোনও সরকারি সহায়তা করা যায় কি না তা নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব ৷"
আরও পড়ুন:
- অমানবিক হাসপাতাল ! পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ছাড়াতে জমি বন্ধক পরিবারের
- মদ্যপ অবস্থায় বচসা, বন্ধুর হাতে কেরলে খুন মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিক !
- করমণ্ডলে দুর্ঘটনার 10 মাস পরও নিখোঁজ কাকদ্বীপের 2 পরিযায়ী শ্রমিক, ভিক্ষাবৃত্তি পরিবারের