সোদপুর, 15 অগস্ট:"মেয়ের জীবনের বিনিময়ে যদি অর্থ নিই, তাহলে আমার মেয়েটা খুবই দুঃখ পাবে", সাফ জানালেন আরজি কর হাসপাতালে মৃত নির্যাতিতার বাবা-মা ৷ বৃহস্পতিবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকরা ৷ নির্যাতিতার বাবা জানালেন, দোষীর চরম শাস্তির বিষয়ে সিবিআই তাদের আশ্বস্ত করেছে ৷
এদিন আরজি কর কাণ্ডে পাঁচ জন চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সিবিআই ৷ টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলও সিবিআই-এর স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে গিয়েছিলেন ৷ কারণ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটি টানা থানার অন্তর্ভুক্ত ৷ সিবিআই আধিকারিকরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে তদন্ত করছে ৷
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আরজি করে নিহত নির্যাতিতার বাবা বলেন, "সিবিআই-কে যা বলেছি, সেগুলি আইনগত বিষয় ৷ সেগুলি বলা সম্ভব নয় ৷ সিবিআই-এর সঙ্গে যে সমস্ত কথা হয়েছে, তা বলা মুশকিল ৷ তাঁরা আমাদের বয়ান রেকর্ড করেছে ৷ আমাদের কাছে যে সব নথি, প্রমাণ আছে, তাও লিখিতভাবে নিয়ে গিয়েছে ৷" তদন্ত নিয়ে সিবিআই কী বলেছেন ? এর উত্তরে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "সিবিআই বলেছে, আপনাদের কাছে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তার ভিত্তিতে দোষীকে খুঁজে বের করতে পারলে, তার চরম শাস্তি হবে ৷ যত দ্রুত সম্ভব তা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আধিকারিকরা ৷"
গতকাল রাতে আরজি করে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি নির্যাতিতার বাবা-মা ৷ তাঁরা বলেন, আরজি কর থেকে আমরা অনেক দূরে রয়েছি ৷ তাই, বিষয়টি সম্পর্কে ঠিক জানা নেই ৷" রাত দখলের কর্মসূচিতে কোটি কোটি মানুষের মিছিলকে সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা ৷ বাবা-মা বলেন, "আমরা লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে মেয়ের কাছে কৃতজ্ঞ ৷ কোটি কোটি ছেলেমেয়ে দেশে, এমনকী দেশের বাইরেও আমার মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে পথে নেমেছে ৷ এঁরা প্রত্যেকেই আমাদের সন্তান ৷ ওঁদের পাশে আমরা সবসময় রয়েছি ৷ আমরা তাঁদের আন্তরিক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা জানাই ৷"
মেয়ের মৃত্যুতে কোনও আর্থিক সাহায্য চাই না ! শুধু চাই ন্যায়বিচার ৷ সেটা হলে তখন আর্থিক সাহায্যর বিষয়টি ভেবে দেখবেন তাঁরা ৷ নির্যাতিতার বাবা বলেন, "এ নিয়ে আমরা আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি ৷ আবারও বলছি, মেয়ের জীবনের পরিবর্তে যদি ক্ষতিপূরণ নিই, তাহলে আমার মেয়ে দুঃখ পাবে ৷"
আরজি কর হাসপাতালে মেয়ের মর্মান্তিক পরিণতির পিছনে হাসপাতালের ভিতরের কেউ জড়িত রয়েছে বলে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ৷ হাসপাতালে রাতে ডিউটি করার পরিকাঠামোগত সমস্যার কথাও তুলে ধরেছিলেন নিহতের বাবা-মা ৷
গত 9 অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের চারতলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন মৃতদেহ ৷ তিনি স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন ৷ তাঁকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে ৷ এরপর থেকে শুরু হয় পড়ুয়া চিকিৎসকদের আন্দোলন ৷ এই ঘটনার 24 ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয় হাসপাতালের এক সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ৷ তবে ওই ছাত্রীর মৃত্যুতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে ৷