কলকাতা, 10 জুলাই: পূর্ব কলকাতায় জলাভূমি বুজিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল, বাড়ি, কারখানা এমনকী রিসর্ট। বেআইনি নির্মাণ হয়েছে চিহ্নিত করার পরই সেগুলি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ তা সত্ত্বেও কেন এতদিনে সেসব বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হল না ৷ মামলার শুনানিতে বুধবার প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি সিনহা এ দিন প্রশ্ন তোলেন, "এতদিন ধরে কী করেছে প্রশাসন? কোনও আংশিক কাজ নয়, সামগ্রিকভাবে কী করেছেন জেলাশাসক?"
রাজ্য আদালতে জানায়, গত বছর ডিসেম্বরে হাইকোর্ট বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ৷ সেই অনুযায়ী, তিনতলা বাড়ি-সহ বেশ কয়েকটি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। 52টি ক্ষেত্রে এই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । পাঁচশোরও বেশি বেআইনি নির্মাণ রয়েছে সেখানে । পুরসভা ও জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কাজ করছে ।
পালটা বিচারপতি সিনহার প্রশ্ন, "ভাঙা কি শুধু কাগজ কলমে হয়েছে? কবে ভাঙা হয়েছে, কোথায় কোথায় ভাঙা হয়েছে, তার তথ্য কোথায়? ওই জলাভূমি আগের অবস্থায় ফেরাতে হবে। এতদিন ধরে কী করছে প্রশাসন? রিপোর্ট দিয়ে একই কথা দিনের পর দিন বলে চলেছেন। আমরা ফলাফল চাই। আর কতদিন এই সব বেআইনি নির্মাণ দাঁড়িয়ে থাকবে? জেলাশাসক উদাসীন আচরণ করছেন, বলতে বাধ্য হচ্ছি ।" মামলাকারীর আইনজীবী জানান, আদালত প্রথম যে বাড়ি ভাঙতে বলেছিল, আজ পর্যন্ত সেটাতেই কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
বিচারপতি সিনহার পর্যবেক্ষণ, "জেলাশাসক যদি এগিয়ে না-আসেন তাহলে এই বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হবে না। মানছি, সেখানে অনেক বিক্ষোভ হবে। কিন্তু জেলশাসক চেষ্টা না-করলে কিছু হবে না। আপনারাই 500-র বেশি বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করেছেন। অন্তত পাঁচটা ভাঙার প্রমাণ দিন। ওই জলাভূমি আগের অবস্থায় ফেরাতেই হবে। গয়ংগচ্ছ মনোভাব আর বরদাস্ত করা যাচ্ছে না। এবার থেকে এই মামলার লাগাতার শুনানি করব। বেআইনি নির্মাণ ভাঙা বা সেসব চিহ্নিত করার কাজ চলছে ধীর গতিতে ।"
বিচারপতি নির্দেশে জানিয়েছেন, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কর্তৃপক্ষকে (ওয়েট ল্যান্ড অথরিটিকে) 31 জুলাই কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে বেআইনি নির্মাণের যাবতীয় নথি সিইএসসি ও ডব্লিউবিএসইডিসিএল-কে দিতে হবে । কোথায় কোথায় বেআইনি নির্মাণে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে সেসব খতিয়ে দেখবে ওই দুই সংস্থা । তারা রিপোর্ট দেবে আদালতকে।