কলকাতা, 19 নভেম্বর:পথদুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি পরিবহণ সংগঠনগুলির সমস্যা সুরাহা করতে 2015 সাল থেকে প্রতি মাসে লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যে বৈঠক হত, তা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এই বৈঠক হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যাওয়াকে সাম্প্রতিক পথদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বেসরকারি বাসমালিকরা । তাই তাঁরা চান ফের শুরু হোক সেই বৈঠক ৷
সম্প্রতি সল্টলেকে দুটি বাসের রেষারেষির বলি হয় এক স্কুল পড়ুয়া । এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আর তারপরেই পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে ফোন করে পুরো ঘটনার খবর নেন তিনি এবং জরুরি ভিত্তিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের ডাক দেওয়ার নির্দেশ দেন । অবিলম্বে পথদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে বেপরোয়া চালকের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার মামলা রুজু করা হবে বলে সেই বৈঠকে জানানো হয় বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলিকে ।
ওই বৈঠকে সরকার ও মালিক পক্ষের তরফে একাধিক প্রস্তাবের আদানপ্রদান হয় । বন্ধ হয়ে যাওয়া মাসিক বৈঠকের প্রসঙ্গ তোলেন বেসরকারি বাসমালিকরা । ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু ওইদিনের বৈঠকে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন ।
ইটিভি ভারতকে তিনি জানান যে, "বাসমালিকদের অভাব অনুযোগ শোনা, তার পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তা ও অন্যান্য ট্রাফিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্যেই আগে প্রতি মাসে লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পরিবহণ সংগঠনগুলির বৈঠক হত । সেই বৈঠক বহুদিন বন্ধ । বারবার বলা সত্ত্বেও সেই বৈঠক চালু করা হয়নি । আবার এই বৈঠক চালু হলে নিঃসন্দেহে একদিকে যেমন পথদুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনই পরিবহণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে যে সমস্যাগুলি হয়ে রয়েছে সেগুলির জট খুলবে ।"
উল্লেখ্য, পুলিশের বিরুদ্ধে সাইটেশন মামলার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় বাস ও মিনিবাস মালিকদের অভিযোগ-সহ পথদুর্ঘটনা এবং পরিবহণের একাধিক বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল । মদন মিত্র পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন মালিক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে 2015 সালের 3 অক্টোবর তৎকালীন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় একটি রেজোলিউশন পাশ করান ৷ যার মধ্যে 'বি' অনুচ্ছেদে প্রতি মাসে লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে বাস ও মিনিবাস মালিকদের বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয় ।
সেই মতো প্রতি মাসে লালবাজারের কনফারেন্স রুমে ডিসি ট্রাফিক ও বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলি থেকে দু'জন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠক হত ৷ সেই বৈঠকে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার কমিশনারেটের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকতেন । এরকম বেশ কয়েকটি বৈঠক হলেও কিছুদিন পর থেকে কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই বৈঠক আর করা হয়নি ।
অন্যদিকে, বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, মূলত সাইটেশন মামলা ও পরিবহণের বাকি বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হত । দুই পক্ষের সমস্যা ও তার সমাধানের কথা এবং নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হত । এর মধ্যে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল পথদুর্ঘটনা এড়ানোর বিষয়টি ।
তিনি বলেন যে, "আবার যদি এই বৈঠক শুরু হয়, তাহলে পথদুর্ঘটনা একেবারে বন্ধ করা না গেলেও অনেকাংশে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে । এছাড়াও বৈঠকটি শুরু হলে পুলিশ ও পরিবহণ সংগঠনগুলির মধ্যে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও কমতে পারে । তাই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটা যোগাযোগ থাকলে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, কোথায় কী ধরনের পদক্ষেপ করা দরকার, সেই দিকগুলিতে অনেক বেশি নজর দেওয়া সম্ভব হবে । পথদুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রী এবং চালকদের ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্বন্ধে অবগত করার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই মালিকরা অভিযান করলেও পুলিশ এবং পরিবহণ সংগঠনগুলি যদি যৌথভাবে এই অভিযানগুলি চালায়, তাহলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে ।"
যদিও সম্প্রতি যে বৈঠকটি হয়, সেখানে পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে যাতে আবারও মাসিক বৈঠকটি শুরু করা যায়, সেই বিষয়টি দেখা হবে । লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে খবর, আগে এই বৈঠকটি হলেও যে কোনও কারণে তা বন্ধ হয়ে যায় । তবে আবার এই বৈঠক চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে । এই বিষয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে ।