পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

101 বছর বয়সে প্রয়াত বৌদ্ধ পন্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক - SUNITIKUMAR PATHAK PASSES AWAY

1924 সালের 1 মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক।

SUNITIKUMAR PATHAK PASSES AWAY
বৌদ্ধ পন্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক (ফাইল ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 5, 2024, 9:55 AM IST

বোলপুর, 5 ডিসেম্বর: প্রয়াত হলেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 101 বছর। শান্তিনিকেতনের অবনপল্লীর বাড়িতে শেষঃনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ৷ 1954 সালে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা শুরু হয়েছিল ৷ হিমালয়ের দুর্গম এলাকা-সহ দেশ, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন একাধিক মূল্যবান পুঁথি ৷

তাঁর কথা শুনে শুনে যিনি লিখে যেতেন সেই রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, "101 পার হয়ে 102-এর কাছাকাছি তাঁর বয়স হয়েছিল ৷ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উনি বলে যেতেন, আমি লিখতাম ৷ ওঁর মতো পণ্ডিত ব্যক্তি আমি আর দেখিনি ৷ আমাদের খুব খারাপ লাগছে।" পণ্ডিত সুনীতি কুমার পাঠকের দখলে ছিল বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিব্বতী, মঙ্গোলিয়া চিনা, পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃতের মতো 9টি ভাষা। এমনকী, সব-কটি ভাষাতেই প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা ছিল তাঁর। লিখেওছেন তিনি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অধ্যাপক সিআর লামা ও সুনীতিবাবুর হাত ধরেই 1954 সালে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগ শুরু হয়েছিল। গবেষণার সুবাদে তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রাচীন তালপাতার পুঁথির ভাণ্ডার। যা ভাষাচর্চার জগতে অমূল্য সম্পদ।

সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে এক সময় চষে বেড়িয়েছিলেন ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলিতে। 2023 সালে ইটিভি ভারত-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষৎকারে তিনি তাঁর গবেষণার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছিলেন। 1924 সালের 1 মে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মলিঘাঁটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। ছেলেবেলাতেই মা'কে হারিয়েছিলেন। মামার বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই পড়াশোনা। পরবর্তীতে কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃতি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। 1938 সালে একবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখার সুযোগও হয়েছিল তাঁর। ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তিব্বতী ভাষা শিক্ষা ৷ প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় কালিম্পং-এ গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

1954 সালে 205 টাকা বেতনে বিশ্বভারতীর পুঁথি বিভাগে যোগদান করেছিলেন সুনীতিকুমার পাঠক। সেই বছরই অধ্যাপক সিআর লামার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিশ্বভারতীতে ভারত-তিব্বতী চর্চা বিভাগের প্রবর্তন করেছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি নিজেও বিশ্বভারতীর চিনাভবনে চিনা ভাষার শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। 1961 সালে ভারত সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন সুনীতিবাবু। ভারতীয় সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য লাদাখ সীমান্তে তিব্বতী ভাষার বিভিন্ন তথ্য ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। 1969 সালে পুনরায় বিশ্বভারতীতে যোগদান করেছিলেন ৷ 1984 সালে বিশ্বভারতী থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

এক সময় হিমালয়ের পাদদেশে প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় গুটিকতক বসতি নিয়ে গড়ে ওঠা গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেরিয়েছিলেন সুনীতিবাবু। সরকার তাঁকে গবেষণার জন্য গাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু, তা তিনি নেননি। পায়ে হেঁটে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মানুষের মুখের ভাষা। অর্থাৎ, ভাষা বৈচিত্র্য, ভাষার ব্যবহার, ধরন, প্রকৃতি নিয়ে তাঁর গবেষণা। এছাড়াও, বৌদ্ধতন্ত্র, বৌদ্ধশাস্ত্র নিয়ে তাঁর গবেষণা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত 200-রও বেশি প্রবন্ধ লিখেছিলেন।

ABOUT THE AUTHOR

...view details