পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বিরোধীদের অভিযোগের মাঝে মতুয়া গড়ে পুরো তহবিল খরচের দাবি শান্তনুর - Lok Sabha Elections - LOK SABHA ELECTIONS

Lok Sabha Elections 2024: 2019 সালে বনগাঁ লোকসভা আসনে জয়ী হন শান্তনু ঠাকুর ৷ দু’বছর পর তাঁকে মন্ত্রী পরিষদে জায়গা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি ৷ ফলে তিনি কতটা কাজ করেছেন, সেই প্রশ্ন উঠছে বারবার ৷ তাই ইটিভি ভারত খতিয়ে দেখল কী বলছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের রিপোর্ট কার্ড ৷

Lok Sabha Elections 2024
Lok Sabha Elections 2024

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 25, 2024, 2:12 PM IST

বনগাঁয় বিমানবন্দর তৈরির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন শান্তনু

বনগাঁ, 23 মার্চ: 2015 সালের আগে মতুয়া গড়ে আধিপত্য ছিল তৃণমূলের । সেই সময় সাংসদ ছিলেন ঠাকুরবাড়ির সদস্য কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর । তাঁর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর গাইঘাটা বিধানসভা থেকে তৃণমূল টিকিটে জয়ী হন এবং রাজ্য সরকারের উদ্বাস্তু দফতরে মন্ত্রিত্ব পান । পরে তাঁর হাত ধরেই ঠাকুর বাড়িতে বিজেপির প্রবেশ ।

2015 সালে বনগাঁ লোকসভার উপ-নির্বাচনের আগে হঠাৎ মন্ত্রিত্ব ছাড়েন মঞ্জুল । দিনকয়েকের মধ্যে যোগদান করেন বিজেপিতে । উপ-নির্বাচনে মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করে বিজেপি । প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলের প্রার্থী হন । তখন শান্তনু ঠাকুর অস্ট্রেলিয়ায় থাকতেন । রাজনীতিতে তাঁর অভিষেক হয়নি । উপ-নির্বাচন জেঠিমার কাছে হেরে অস্ট্রেলিয়া চলে যান সুব্রত ।

মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের হাত ধরে বিজেপি মতুয়া বাড়িতে প্রবেশ করলেও 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতাবালা ঠাকুরকে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ হন শান্তনু ঠাকুর । দু’বছর পর তিনি জায়গা পান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রী পরিষদেও ৷

শান্তনুর সাংসদ হওয়ার পর পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর ৷ চলে এসেছে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবারও বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে শান্তনুর উপরই ভরসা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ প্রার্থী হিসেবে নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে তাঁর ৷ এই পরিস্থিতিতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে শান্তনু ঠাকুর কতটা কাজ করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা ?
শান্তনু ঠাকুর জানান, 2019 থেকে 2024 সালে তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিলে 25 কোটি টাকা এসেছে । রাস্তা-ঘাট, স্কুলের উন্নয়ন-সহ বিভিন্ন খাতে সম্পূর্ণ টাকাই তিনি খরচ করেছেন ।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী কাজ হয়েছে বনগাঁয়-

  • পাঁচ বছরে তিন থেকে চারশো প্রজেক্ট হয়েছে ।
  • স্বরূপনগরে একটি বড় সেতু হয়েছে ।
  • বিভিন্ন স্কুলের উন্নয়নের কাজ হয়েছে ।
  • শৌচাগার তৈরি হয়েছে ।
  • পানীয় জলের প্রকল্প হয়েছে ।
  • ছোট বড় রাস্তা তৈরি হয়েছে ।
  • সোলার বাতি স্তম্ভ বসেছে লোকসভার বিভিন্ন এলাকায় ।
  • বিভিন্ন জায়গায় নদীর ঘাট বাঁধানো হয়েছে ।

বনগাঁ লোকসভার সাংসদের পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় জাহাজ ও জলপথ দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তাঁর দফতর থেকে বনগাঁ লোকসভায় কাজ হয়েছে । সেগুলি হল -

  • ইছামতী নদী সংস্কারে 25 কোটি টাকার কাজ হয়েছে ।
  • বনগাঁ-স্বরূপনগরের সংযোগকারী তরণীপুরে ব্রিজ হবে । যার জন্য 164 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ।
  • রেলমন্ত্রক থেকে লোকসভা জুড়ে 14টি স্টেশনের উন্নয়ন হচ্ছে । যার মধ্যে বনগাঁ, কল্যাণী, চাঁদপাড়া ও ঠাকুরনগর স্টেশন অমৃত ভারত প্রকল্পের অধীনে কাজ শুরু হয়েছে ।

শান্তনু ঠাকুর সাংসদ এবং মন্ত্রীর আগে তিনি মতুয়া ধর্মগুরু । মতুয়া অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে শান্তনুর জয়ের পিছনে মতুয়া ভোটের বড় অবদান ছিল । স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, তিনি মতুয়াদের জন্য কতটা উন্নয়ন করেছেন ? শান্তনু ঠাকুরের মতে, তিনি শুধুমাত্র মতুয়াদের সাংসদ নন । ফলে মতুয়াদের জন্য আলাদাভাবে কিছু করেনি তিনি । তবে, মতুয়াদের দীর্ঘদিন দাবি ছিল নাগরিকত্ব । উদ্বাস্ত সমস্যা নিয়ে তাঁর তিন পুরুষ লড়াই আন্দোলন করেছেন । তাঁর সময়ে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে । সিএএ-এর মধ্যে দিয়ে নাগরিকত্ব পেতে চলেছেন মতুয়ারা । যা মতুয়াদের জন্য বড় পাওনা । এছাড়াও মতুয়াদের ধর্মস্থান ঠাকুরনগর ঠাকুর বাড়িতে শৌচালয় তৈরি হয়েছে । বাতিস্তম্ভ বসেছে । মতুয়াদের জন্য থাকার জায়গা তৈরি করা হয়েছে । আগামিদিনেও মতুয়া বাড়িতে আরও অনেক কাজ হবে ।

তবে সাংসদের দেওয়া তথ্যে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে । একাংশ বলেছেন, পাঁচ বছরে প্রচুর কাজ করেছেন শান্তনু ঠাকুর । এক জন সাংসদের যা যা কাজ করা উচিত, তা তিনি করেছেন । পাঁচ বছরে কোনও কাজে তাঁর কাছে গিয়ে ফিরে আসতে হয়নি । এলাকার সামাজিক কাজে ডাকলে শান্তনু ঠাকুরকে কাছে পাওয়া গিয়েছে । কিন্তু অন্য একটি অংশের দাবি, সাংসদ হিসাবে ব্যর্থ শান্তনু । নিজের উন্নয়ন ছাড়া তিনি কিছু করেননি ।

মিহির দাস নামে এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে শান্তনু ঠাকুরকে সাংসদে এলাকার অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে দেখিনি বা শুনিনি ।’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যশোর রোডের সংস্কার দারকার, কিন্তু তা কোথায় ? সাতটা বিধানসভায় এত স্কুল-কলেজ! তার উন্নয়ন কোথায় ? শান্তনু ঠাকুরের দাদুর নামে ঠাকুরনগরে সরকারি কলেজ রয়েছে, সেখানের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কোথায় ?’’ মিহির দাসের কথায়, ‘‘শুনেছি ইছামতী নদীর জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে । কিছু কচুরিপানা তোলা হয়েছে । কিন্তু স্থায়ী সমাধান কোথায় ? বর্ষা এলেই আবার কচুরিপানায় ভরে যাবে ।’’

সাধারণ মানুষের তোলা প্রশ্ন যে নেহাতই রাজনৈতিক বিরোধী মনোভাবের জন্য নয়, তা বোঝা গেল শান্তনু ঠাকুরের আগামিদিনের পরিকল্পনায় । শান্তনু বলেন, ‘‘এলাকায় এখনও অনেক কাজ বাকি আছে । যেমন - যশোর রোডের উন্নয়ন ৷ বিভিন্ন জায়গায় স্কুল গুলির আরও উন্নয়ন করা দরকার । চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার করা ।’’

একই সঙ্গে তিনি জানান, বনগাঁ লোকসভার মধ্যে বিমানবন্দর করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর । যার জন্য জায়গায় রয়েছে । আগামিদিনে বিমানবন্দর হবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. ঘাসফুলে ঘেরা বহরমপুরে 'রবিনহুড' অধীরের খতিয়ান
  2. বিষ্ণুপুরে মুখোমুখি সৌমিত্র-সুজাতা, পাঁচ বছরের কাজের নিরিখে জয়ের হ্যাটট্রিক কি হবে বিজেপি প্রার্থীর?
  3. অসিত মালকে ব্যর্থ সাংসদ তকমা বোলপুরবাসীর, কী বলছে রিপোর্ট কার্ড?

ABOUT THE AUTHOR

...view details