পাণ্ডুয়া, 5 জুলাই:জন্ম থেকেই পৃথিবীর আলো দেখেনি কোনওদিন। কিন্তু শারীরিক বাধা তাঁর সৃষ্টিতে ছাপ ফেলতে পারেনি ৷ শুধুমাত্র অনুমান করেই বানিয়ে চলেছেন কাঠের জিনিসপত্র ৷ যা যে কেউ দেখে অবাক হয়ে যাবেন ৷ শিল্পী হলেন হুগলির পাণ্ডুয়ার অনিল দাস ৷
জন্মান্ধ অনিল দাস শুধুমাত্র হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করেন সিংহাসন (ইটিভি ভারত) স্থানীয় সরাই গ্রামের বাসিন্দা অনিল দাস। পড়াশোনার সেভাবে সুযোগ ও পাননি। বাবার কাঠের দোকান থেকে কাজের হাতে খড়ি ৷ সেই থেকে প্রায় 45 বছর ধরে তিনি বানিয়ে চলেছেন ঠাকুরের চৌকি ও সিংহাসন ৷ তাঁর হাতে যেন শিল্পের দেবতা সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মার অধিষ্ঠান ৷ সরকারি তরফে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবাদ মাসিক এক হাজার টাকা পেলেও, ব্যবসার জন্য কোনও ঋণ পাননি তিনি। তবে এলাকার একাধিক যুবককে কাজ শিখিয়েছেন ৷
বর্তমানে তাঁর কাছে এক কর্মচারী থাকলেও, ভাইপো কাজ করছেন ৷ তবে অনিলবাবু তাঁর সৃষ্টিকে থামিয়ে রাখেননি ৷ তাঁর হাতে সাধারণ কাঠ রূপ পাচ্ছে ঠাকুরের ছোট চৌকি, লক্ষ্মী ও গোপালের সিংহাসনের ৷ তবে চৌকির অর্ডার আসে বেশি তার কাছে । তাঁর ভাইপো সৌমেন দাস জানান, জেঠু হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন তাঁকে । চোখে না দেখলেও কাজের কোনও তফাৎ হয় না। কাঠের মাপ থেকে সব কিছু নিখুঁত ভাবে করতে পারেন । সবকিছুই করেন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ৷
তবে তাঁর আক্ষেপ একটাই, সরকারি সাহায্য সেভাবে পাননি। কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে কিভাবে পেট চালাবেন সেটাই চিন্তার ৷ ভবিষ্য়ত কী হবে সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে কাঠ মিস্ত্রী অনিল দাস বলেন, "সরকারি তরফে প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়াও কোনও সাহায্য পায়নি। ব্যবসার ঋণের জন্য সরকারি দপ্তরে বহুবার গিয়েছি ৷ কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। কাঠের যে কোনও জিনিস হাত দিয়ে অনুভব করে তৈরি করে ফেলতে পারি । কাঠের দরজা-জানলা সবই করতে পারি । তবে সারাবছর জলচৌকি, গোপালের খাট ও লক্ষ্মী সিংহাসন অর্ডার আসে । এই কাজের লাভ কিছু থাকে না । মজুরিটাই থাকে । এই কাজ শিখে বসে থাকবো তাই বাধ্য হয়ে করে যাচ্ছি ।বয়সকালের সরকারি কোনও ভাবে সাহায্য পেলে আমার উপকার হতো ।"