উস্তি (দক্ষিণ 24 পরগনা), 9 নভেম্বর: গত পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে দলীয় কার্যালয় থেকে উদ্ধার হল বিজেপি কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ ৷ মৃতের নাম পৃথ্বীরাজ নস্কর (33)। তিনি দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির সোশাল মিডিয়া কনভেনার ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ দিন আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান পৃথ্বীরাজ নস্কর । এই নিয়ে গত 7 নভেম্বর উস্তি থানাতে গিয়ে পৃথ্বীরাজের পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে । এরপর শুক্রবার গভীর রাতে উস্তি থানার অন্তর্গত দ্বীপের মোড় এলাকার কাছে বিজেপির দলীয় কার্যালয় থেকে উদ্ধার হয় পৃথ্বীরাজ নস্করের ক্ষতবিক্ষত দেহ । পৃথ্বীরাজ আটপাড়া এলাকায় থাকতেন বলে জানা গিয়েছে ।
বিজেপি কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার (ইটিভি ভারত) বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার পুলিশ মর্গে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ । পৃথ্বীরাজের বাড়ির থেকে দ্বীপের মোড় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় 1 কিলোমিটার । বাড়ির এত কাছে এই কাণ্ড ঘটে গেল অথচ কেউ কীভাবে কিছু টের পেল না, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে । তালাবন্ধ দলীয় কার্যালয় কীভাবে এল দেহ ৷ তাহলে কি অন্যত্র মেরে ওখানে দেহ ফেলে রাখা হয়েছে? সেই প্রশ্নও উঠছে ।
গত লোকসভা নির্বাচনে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির পরাজিত প্রার্থী অশোক পুরকাইতের ছায়াসঙ্গী ছিলেন পৃথ্বীরাজ নস্কর । পরিবারের দাবি, তখন থেকেই তিনি শাসকদল তৃণমূলের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলেন । পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই পৃথ্বীরাজকে অপহরণ করা হয়েছিল । তা করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই । ওরাই খুন করেছে এই বিজেপি কর্মীকে । তারপর দেহ নিয়ে এসে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে ফেলে রেখে গিয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ ।
বিজেপির সোশাল মিডিয়া কনভেনার পৃথ্বীরাজ নস্কর (নিজস্ব ছবি) পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা । এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয়েছে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশকে ৷
মৃতের বাবা অশোক নস্কর বলেন, "আমার ছেলেকে রাজনৈতিক কারণে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে । এলাকায় বিজেপির মুখ হিসাবে পরিচিত ছিল আমার ছেলে । এলাকার বহু মানুষদের সাহায্য করত । এলাকায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল আমার ছেলে ৷ আমরা চাই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি ।"
দলীয় কর্মীর মৃত্যুতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন মথুরাপুর বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবেন্দুসুন্দর নস্কর । তিনি বলেন, "আমাদের দলের একনিষ্ঠ এবং সক্রিয় কর্মীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা । আমরা এর বিচার চাই । গত পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল পৃথ্বীরাজ ৷ পরিবারের লোকজন থানায় গেলেও পুলিশ তেমন সহযোগিতা করেনি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পৃথ্বীরাজের দুটো ফোনই খোলা ছিল ৷ পুলিশ চাইলে টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পৃথ্বীরাজকে উদ্ধার করতে পারত । পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জেরে তরতাজা এই যুবকের প্রাণ চলে গেল । আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব । এই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুক পুলিশ ।"
যদিও বিজেপির তরফে তোলা অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল ৷ এই বিষয়ে মগরাহাট 1 নম্বর ব্লকের তৃণমূলের যুব সভাপতি ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, "এই ধরনের খুনের রাজনীতিতে তৃণমূল বিশ্বাস করে না । বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই খুন । আমরা চাই পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করুক এবং এই ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত দোষীদেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক ।"