আসানসোল, 19 জানুয়ারি: তাঁর লাগানো গাছের সংখ্যা প্রায় 5 লাখ । ধু ধু প্রান্তরের রুক্ষ ভুমিতে যেখানে চাষবাস হত না, সেখানে বহু বছর ধরে গাছ লাগিয়ে গিয়েছেন জামুড়িয়ার রাধেশ্যাম গড়াই । গাছেদের পরিচর্যা করেছেন । গাছও বড় হয়েছে । সবুজ বনাঞ্চল যেন রাধেশ্যামের নিজের বাগান হয়ে উঠেছিল । সেই বাগান দেখে আনন্দেই ছিলেন 'বাঞ্ছারাম' রাধেশ্যাম । কিন্তু এখন সেই গাছেদের নির্বিচারে নিধন হচ্ছে । আর তাতেই এই প্রবীণ বয়সে এসে ডুকরে কেঁদে উঠছে 'গাছ দাদু' রাধেশ্যাম গড়াইয়ের মন । তাঁর কথায়, "এই শোকের চেয়ে মৃত্যুও ভালো"।
জামুড়িয়ার আলিনগর গ্রামের বাসিন্দা রাধেশ্যাম গড়াই । বর্তমানে বয়স 75 বছর । ইন্দির গান্ধি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ব্রাজিলে সফরে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, বিশ্ববাসীকে গাছ লাগানোর কথা। রেডিয়োতে সেই কথা শুনে অনুপ্রাণিত হন রাধেশ্যাম । ভাবেন, জামুড়িয়ার রুক্ষ মাটিতে গাছ লাগানোর কথা । কিন্তু ভাবা মানে সহজ নয় । লাল কাঁকুড়ে মাটি । জল ধারণের ক্ষমতা নেই, তাই চাষবাস হয় না । কিন্তু তা থামাতে পারেনি রাধেশ্যামকে ।
নিজের কিছু ডাঙা জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছ দিয়ে তাঁর গাছ লাগানো শুরু হয় । সারাদিন ধরে গাছেদের পরিচর্যা করতেন । সাইকেল নিয়ে দূরে পুকুর থেকে জল এনে গাছেদের বাঁচিয়ে রাখতেন রাধেশ্যাম । তাঁর এই প্রচেষ্টা দেখে গ্রামবাসীরাও অবাক হন ৷ নিজের জমি শেষ হতেই, গ্রামবাসীদের মৌখিক আবেদন করেন রাধেশ্যাম । চাষ না হওয়া, পড়ে থাকা বন্ধ্যা জমি দিতে তখন আপত্তি করেননি গ্রামবাসীরা । কাঠার পর কাঠা জমিতে বছরের পর বছর গাছ লাগিয়ে গিয়েছেন রাধেশ্যাম গড়াই ।
রাধেশ্যাম গড়াই জানিয়েছেন, "তিনটি মৌজায় কয়েকশো বিঘা জমিতে আমি প্রায় 5 লাখ গাছ লাগিয়ে তাদের বাঁচিয়েছি । প্রথমে ইউক্যালিপটাস পরে নিম, বট, পাকুড়, পলাশ-সহ নানা ওষধি গাছ লাগিয়েছি । বাড়িতেই চারা তৈরি করেছি । সেই চারা লাগিয়েছি । গাছের তৈরি বীজ থেকেই নতুন চারা হয়েছে। এভাবেই বেড়েছিল বনাঞ্চল।"