পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

'দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার রব উঠেছে', ইটিভি ভারতে অকপট অমর্ত্য সেন - AMARTYA SEN

বেশ কিছু দিন ধরে শান্তিনিকেতনে পৈতৃক ভিটেতে রয়েছেন অমর্ত্য । সেই বাড়িতে বসেই ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি অভিষেক দত্ত রায়ের সঙ্গে অকপট অধ্য়াপক সেন ৷

Amartya Sen Exclusive on ETV Bharat
ইটিভি ভারতে একান্ত সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 9, 2025, 6:13 PM IST

Updated : Feb 9, 2025, 6:35 PM IST

বোলপুর, 9 ফেব্রুয়ারি: বরাবরই তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। আরও একবার সাম্প্রদায়িকতার বিপদ নিয়ে সরব নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন। নিজের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, "ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার রব উঠেছে।" আর এখানেই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নীতির প্রশংসা করেন। তাঁর মতে, সাম্প্রদায়িকতার মোকিবালায় মনমোহন যে নীতি নিয়েছিলেন তা কার্যকরী।

বেকারত্ব বড় সমস্যা ৷ আর এই বেকারত্ব দূর করতে মনমোহন সিং অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে মনে করেন 'ভারতরত্ন' অমর্ত্য সেন ৷ সদ্য কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হয়েছে। তাতে বেকারত্ব ও মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিয়ে কোনও ভাবনা ছিল না, এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী সাংসদ থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরা। সেই বিষয়কেই কার্যত মান্যতা দিলেন নোবেলজয়ী ।

ইটিভি ভারতে অমর্ত্য সেন (ইটিভি ভারত)

2024 সালের 26 ডিসেম্বর প্রয়াত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেই সময় বিদেশে ছিলেন অমর্ত্য ৷ দু'জনের সখ্যতা থেকে শুরু করে অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনা সর্বজনবিদিত। মনমোহনের জীবনাবসান প্রসঙ্গে অমর্ত্য বলেন, "খুব ক্ষতি হল ৷ মনমোহন সিং ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতির বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন । আমার মতে, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দেশের নানা উন্নতি হয়েছে ।"

তিনি আরও বলেন বলেন, "মনরেগা (মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান MGNREGA) বলে যে জিনিসটা চলছে তার লক্ষ্য সাধারণের হাতে কাজ পৌঁছে দেওয়া ৷ মনমোহন মনে করতেন. ভারতে কর্মসংস্থানের সুযোগ না বাড়ালে কোনওভাবেই জাতীয় সমৃদ্ধি সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে না । এর মধ্যে বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা ।"
তিনি আরও বলেন, "রাজনীতিতে মনমোহন ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে যা বলেছেন এবং করেছেন তাতে শেখবার বহু জিনিস আছে । এখন ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা রব উঠেছে । সেই জিনিসটা রোধ করতে মনমোহনের সুচিন্তিত মতামত খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি ।" সবমিলিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বেকারত্ব দূরীকরণের মতো বিষয়ে মনমোহন সিংহের ভূমিকাকেই মান্যতা দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ।

শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়িতে ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন (ইটিভি ভারত)

এই প্রথম নয় এর আগেও একাধিকবার সাম্প্রদায়িকতার বিপদ নিয়ে সরব হয়েছিলেন নোবেলজয়ী বঙ্গসন্তান। ইটিভি ভারত 2024 সালের 12 জানুয়ারি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের একটি মন্তব্য প্রকাশ্যে আনে। তার দশদিন বাদে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন ছিল। মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে দেশে তখন সাজো সাজো রব। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টচার্য অর্মত্য সেনকে মেইল করেছিলেন। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সুচিন্তিত পরামর্শ চেয়েছিলেন।

জবাবে অমর্ত্য জানান, তিনি বাংলাকে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে দেখতে চান। তাঁর মনে হয়েছিল, সাম্প্রদায়িকতার বিপদ কী ভয়াবহ হতে পারে তা গোটা দেশের কাছে তুলে ধরুক বাংলা। আর সেই প্রয়োজন থেকেই বঙ্গের রাজনীতীতে তাদেরই শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন যারা নিজেরা শুধু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাজিত করবে তাই নয়, বাকিদেরও এর বিপদ সম্পর্কে অবহিত করতে পারবে।

মেইলে তিনি লেখেন, "আজ বাংলার প্রধান ইস্যু হল ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়ানো । যার শক্তিশালী প্রতিরক্ষার প্রয়োজন । দীর্ঘ ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও কখনও কখনও তা গুরুত্ব পায় না । বাংলায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত রাজনীতি দরকার । ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির শক্তিকে হারিয়ে যেতে দেওয়া ভুল হবে । সবচেয়ে বড় কথা, বাংলার ঐক্যবদ্ধ পরিচয়কে হারাতে দেওয়া যাবে না ।"

এই ইমেলেই স্মৃতিচারণ করে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন আরও লেখেন, "আমি আমার দাদামশাই ক্ষিতিমোহন সেনের কথা ভাবছিলাম । তিনি ব্যখ্যা করেছিলেন, হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের গুরুত্ব একে অপরকে সহ্য করা নয় ৷ বরং হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে কাজ করাই ঐক্যের গুরুত্ব ৷ "

2014 সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতাও করেছেন অমর্ত্য। সেই সমালোচনা যে শুধু অর্থনীতিতে আটকে তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বিজেপির শিক্ষানীতিরও বিরোধিতা করেছেন। শিক্ষায় গৈরিকীকরণ যে আগামিদিনের জন্য ভয়াবহ পরিণাম নিয়ে হাজির হবে তাও বলেছেন।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন অতীতে । আচার্য পদ ছাড়ার পর কাজ করেছেন পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবেও। তবে সেটা বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে। তথ্য বলছে, 2016 সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি লিখে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন সমিতিকে জানান, আচার্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ তিনি চান না। কারণ, বিজেপি তাঁকে চায় না। এই চিঠি রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় ফেলে দেয়। এরপর আচার্য পদ ছেড়ে শুধু পরিচালন সমিতির সদস্য ছিলেন। সেটাও খুব বেশিদিন নয়।

ফল যা হওয়ার তাই, বিজেপির তরফ থেকেও একাধিক সমালোচনা ধেয়ে এসেছে তার জন্য। কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা তো বটেই বাংলার বিজেপি নেতারাও কটাক্ষ করেছেন অমর্ত্যকে। বেশিরভাগ সময়ই সেই সমালোচনা ছিল ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে। কিন্তু তিনি থেকেছেন নিজের মতো। অযোধ্যা রাম মন্দিরের উদ্বোধনের আগেও তাঁকে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করতে শোনা গিয়েছে। এবার যখন তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করার কথা বলছেন তার ঠিক দু'দিন আগে দিল্লিতে ঘটে গিয়েছে রাজনৈতিক পালাবদল।

Last Updated : Feb 9, 2025, 6:35 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details