কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর: মঙ্গলবারই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হয়েছে ‘অপরাজিতা ওম্যান অ্য়ান্ড চাইল্ড বিল’ ৷ সেই বিল পাশের চব্বিশ ঘণ্টা কাটার আগেই নারী সুরক্ষা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন মোদি সরকারের মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ৷ যা স্বাভাবিকভাবেই হাতিয়ার তুলে দিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে৷ তিনিও রিজিজুর বক্তব্যের রেশ টেনে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে ৷
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে চারিদিকে যখন প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, সেই সময়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় জানিয়েদেন যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন তৈরির জন্য বিল পাশ করানো হবে ৷ সেই বিল গতকাল, মঙ্গলবার পাশ করানো হয় বিধানসভায় ৷
বিল পাশের আগে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নারী সুরক্ষায় গাফিলতি সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেশের লজ্জা বলেও কটাক্ষ করেন তিনি ৷ মোদির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন ৷ নারী সুরক্ষায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি থেকে আরও কী কী পদক্ষেপ করেছেন তাঁর সরকার করেছে, সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
তারই পালটা জবাব হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বুধবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন ৷ সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমি দুঃখিত যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নারী ও শিশুদের জন্য দ্রুত বিচার প্রদানের জন্য় তাঁর সবচেয়ে দায়িত্ব উপেক্ষা করেছেন ।’’
ওই পোস্টে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী রিজিজু একটি চিঠিও দেন ৷ সেই চিঠিটি 2021 সালে তিনি মমতাকে লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী হিসেবে লিখেছেন ৷ ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট এবং পকসো আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ওই চিঠি তিনি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ৷ সেই চিঠির কথা উল্লেখ করে রিজিজু লেখেন যে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা প্রদানে মমতার গাফিলতি ওই চিঠিতে স্পষ্ট হয়েছিল ৷ একই সঙ্গে ওই পোস্টে রিজিজু জানান যে 2018 সালে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য সংসদে একটি কঠোর আইন পাশ করা হয়েছিল ৷ রাজ্য সরকারগুলিকে এই নিয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ করতে হবে ৷
রিজিজু এখানেই থামেননি ৷ পরে আরও একটি পোস্ট করেন তিনি ৷ সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘এটি (নারী ও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন) একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। দয়া করে এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করবেন না । খুব শক্তিশালী আইন প্রয়োজন, কিন্তু শক্তিশালী পদক্ষেপ আরও গুরুত্বপূর্ণ । চিঠি লেখার সময় মিডিয়া এই খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে !’’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিধানসভায় বিল পাশের সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মমতার জমানায় রাজ্যে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সংক্রান্ত একাধিক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ৷ সেই সব ঘটনায় মমতা কী কী মন্তব্য করেছিলেন, সেইগুলিও তিনি জানান ৷ তার পর কিরেন রিজিজুর এই পোস্টকে হাতিয়ার করে তিনি ময়দানে নামেন ৷ নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ৷
সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও তাঁর সরকারের আসল সত্যিটা সামনে আনার জন্য মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে ধন্যবাদ ৷’’ এর পর ওই পোস্টে রিজিজুর পোস্ট করা ছবির কথা উল্লেখ করেন ৷ শুভেন্দু লেখেন, ‘‘2021 সালের এই চিঠি, তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রীর পাঠানো ৷ কিরেন রিজিজু ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্ট এবং পকসো আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়সারা মনোভাব তুলে ধরেন ।’’
ওই পোস্টে শুভেন্দু আরও লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বিষয়টি যোগাযোগ করার পরেও তিনি মহিলা ও শিশুদের জন্য দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছিলেন ।’’ এর পর মমতার উদ্দেশ্যে শুভেন্দু লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য এখন নারী নির্যাতন বিরোধী বক্তব্য রাখছেন, তা মানুষ বুঝতে পারছে ৷ তাই এখন সেই নিয়ে পদক্ষেপ করার সময় এসেছে বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা ৷