কলকাতা, 25 এপ্রিল: তাঁকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভের সুর ধরা পড়ল কাঞ্চন মল্লিকের গলায় ৷ এ দিন কল্যাণ বলেছিলেন যে, গ্রামের মহিলারা উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চনকে দেখে রিয়্যাক্ট করছে বলেই তাঁকে প্রচারের অংশ করতে চাননি শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী ৷ তবে কে তাঁকে এ সব বলছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন কাঞ্চন ৷ তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে সরব হলেও, দলের আরও দুই শীর্ষ নেতা কুণাল ঘোষ ও ব্রাত্য বসুর পূর্ণ সমর্থন গিয়েছে কল্যাণের দিকেই ৷ তাঁদের মতে, সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত জনপ্রতিনিধিদের ৷
উল্লেখ্য, বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও আজ কাঞ্চন মল্লিককে প্রচার গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । গ্রামের মহিলারা কাঞ্চনকে দেখে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বলেই তাঁকে প্রচারে রাখতে চাননি তিনবারের শ্রীরামপুরের সাংসদ । এই ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাঞ্চন বলেন তিনি দলের নির্দেশে দলের প্রচারে গিয়েছিলেন।
তাঁর কথায়, "আমি দলীয় প্রচারে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম । আমাকে উনি যেতে বারণ করলেন, বললেন তুমি যেয়ো না । গ্রামের মানুষ রিয়্যাক্ট করছে। আমাকে ভোটটা করতে দাও । ওঁকে কে এ সব বলছে এটা জানি না । এখনও পর্যন্ত আমার বিপক্ষে গিয়ে কেউ বিক্ষোভ দেখায়নি । আমি ওঁর দেওয়াল লিখনে ও সব প্রচারে ছিলাম । আমার সঙ্গে ওঁর সঙ্গে কোনও বাদানুবাদ হয়নি । উনি যদি বলেন যেতে হবেন না, আমি যাব না ।"
কাঞ্চনের গলায় ক্ষোভ ধরা পড়লেও কল্যাণের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব ৷ তৃণমূল ভবনে বৃহস্পতিবার এই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে, দুই রাজ্য নেতা ব্রাত্য বসু এবং কুণাল ঘোষ এক্ষেত্রে বিদায়ী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছেন ।
এ দিন এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, "আমি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরো সমর্থন করছি । কাঞ্চন মল্লিক একজন বিশিষ্ট অভিনেতা । তিনি বিধায়কও । যেহেতু তিনি জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন, জনগণের দরবারে আছেন, সেখানে তিনি যা করছেন তাঁর নিজের ব্যাপার । কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে যা তিনি আনেন, সে বিষয়ে অনেক সতর্ক হওয়া উচিত । যেহেতু তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ৷ সবটাই শিল্পী, সবটাই অভিনেতা এটা হতে পারে না ৷ অতএব কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন একদম সঠিক কথা বলেছেন ।
একা কুণাল ঘোষ নন, আজকের ঘটনায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও । আর সেই জায়গা থেকেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, এই শিল্পী এবং অভিনেতা বিধায়কের পাশে কি তাহলে দল নেই ? প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময়ে সোশাল মিডিয়ায় বিধায়ক কাঞ্চনের বেশকিছু ভিডিয়ো এমন দেখা গিয়েছে, যা দলকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে । দলের অন্দরে এই নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর । এ দিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধায়ককে তাঁর প্রচার জিপ থেকে নামিয়ে দেওয়া সেই ঘটনাকে আরও একবার প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে । মনে করা হচ্ছে, সেই জায়গা থেকেই এ দিন দলের কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন কুণাল এবং ব্রাত্য ।
প্রসঙ্গত, কোন্নগর নবগ্রাম অঞ্চলে প্রচারে গিয়েছিলেন কাঞ্চন মল্লিক । আজ সেখানেই প্রচার ছিল তৃণমূলের শ্রীরামপুরের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখানেই তিনি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তিনি যেন তাঁর প্রচার গাড়ি থেকে নেমে যান । গ্রামের মহিলারা তাঁর উপস্থিতি ভালোভাবে নিচ্ছেন না । কল্যাণ বলেন, "উনি আমার সঙ্গে যখন প্রচারে বেরোচ্ছেন গ্রামের মহিলারা কিন্তু ভীষণ রিঅ্যাক্ট করছেন । আমি ওঁকে আগেই বলে দিয়েছিলাম গ্রামে এসো না । আর আমার সঙ্গে প্রচারে শুধু কেন থাকছে ? একজন বিধায়ক সে তো নিজেও প্রচার করতে পারে, সেখানে তো করছে না ৷"
ব্রাত্য ও কুণালের বক্তব্যে কাঞ্চনের পক্ষে সমর্থন না থাকায়, এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে দল সাম্প্রতিক সময়ে সোশাল মিডিয়ায় তাঁর কাজকর্মকে ঠিকভাবে নিচ্ছে না ।
আরও পড়ুন:
- শ্রীময়ীকে বিয়ের জের ! বিধায়ক কাঞ্চনকে প্রচার গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলেন কল্যাণ
- তহবিল খরচ করলেও কল্যাণ-ভূমে কাঁটা স্বাস্থ্য-পরিযায়ী শ্রমিক
- দীপ্সিতাকে ‘মিস ইউনিভার্স’ বললেন কল্যাণ, শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থীর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র কটাক্ষের পালটা জবাব