আম আদমি পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে 2025 সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা অস্বীকার করেছে । নেপথ্যে আলোচনার বিষয়টি অব্যাহত থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিসরে ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের তরফে এই ধরনের কোনও জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । কেজরিওয়ালের জন্য, এই নির্বাচন একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ৷ তাঁর নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার থেকে কম কিছু নয় এবারের ভোট ৷
তাঁর সাম্প্রতিক গ্রেফতারি এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা জামিন মঞ্জুর করার পরে, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৷ আর অতীশিকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ করেন । এই পদক্ষেপটি আসন্ন নির্বাচনকে কেবল আপের শাসন মডেলের জন্য নয়, দিল্লির ভোটারদের উপর কেজরিওয়ালের কর্তৃত্বের ক্ষেত্রেও একটি লিটমাস টেস্ট ৷
অন্যদিকে রয়েছে কংগ্রেস ৷ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাদের সামান্য প্রভাব থাকে ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার ভোটের ভাগ 10 শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে । এমনকি যখন আপ এবং কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনের সময় জোট করেছিল, তখনও কংগ্রেস দিল্লিতে একটিও জিততে পারেনি ৷ তা সত্ত্বেও ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনী গতিশীলতা পরিবর্তন করতে পারে ।
ভোটে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ বিশেষ করে কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট মুসলিম এবং দলিত সম্প্রদায় ৷ তাদের ভোট ভাগ হলে, তা আপের কাছে চ্যালেঞ্জ হবে । এই অসন্তোষের জেরে হয়তো কংগ্রেস জিতবে না ৷ কিন্তু তারা আপকে দুর্বল করে দেবে ৷ যার ফলে বিজেপির লাভ হতে পারে ৷
শেষ পর্যন্ত, জোটের অনুপস্থিতি একটি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যাতে কংগ্রেসের লাভের থেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে আপের । কেজরিওয়ালের লাভ বেশি হবে না ৷ আপের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে দিল্লিকে ধরে রাখার তাঁর ক্ষমতা নির্ধারণ করবে এবং এই উচ্চগ্রামের লড়াইয়ে তাঁর রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অক্ষত আছে, নাকি হ্রাস পেয়েছে, তা বোঝা যাবে ।
দিল্লির নির্বাচনী পরিবর্তনের বিশ্লেষণ: বিধানসভা বনাম লোকসভার গতিশীলতা
দিল্লির নির্বাচনী প্রবণতা বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে সম্পূর্ণ বৈপরীত ফলাফল দেখায় ৷ ভোটারদের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় দ্বৈত-মনোভাব দেখা যায় ৷ 2020 দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ) 53 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ বিজেপি পায় 38 শতাংশ ও কংগ্রেস মাত্র 4 শতাংশ ভোট পায় ৷
এই প্যাটার্ন 2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছিল ৷ যেখানে AAP 54 শতাংশ, বিজেপি 32 শতাংশ এবং কংগ্রেস 9 শতাংশ অর্জন করেছিল । উল্লেখযোগ্যভাবে, 2013 ছিল শেষবার কংগ্রেস রাজ্য নির্বাচনে ঠিকঠাক পারফর্ম করেছিল ৷ সেবার বিজেপি 33 শতাংশ পেয়েছিল ৷ কংগ্রেস পেয়েছিল 24 শতাংশ ৷ প্রথমবার ভোটের ময়দানে নেমে আপ 29 শতাংশ ভোট পেয়েছিল । লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে দিল্লিতে বিজেপির জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে ৷
2024 সালে বিজেপি 54 শতাংশ ভোট পায় ৷ আপ 24 শতাংশ এবং কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পায় ৷ 2019 একই ছবি ছিল ৷ সেবার বিজেপি 56 শতাংশ, আপ 22 শতাংশ ও কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ 2014 সালে বিজেপি 46 শতাংশ, আপ 32 শতাংশ ও কংগ্রেস 15 শতাংশ ৷ তখনও বিজেপির আধিপত্যই দেখেছিল দিল্লি ৷ এক্ষেত্রে দিল্লির ভোটিং আচরণকে যা অনন্য করে তোলে, তা হল সমর্থনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মনোভাব ৷ দিল্লি আদর্শগতভাবে বিজেপির দুর্গ ৷ এখানে বিজেপির ভোট 32 শতাংশ ৷ আপের মূল নির্বাচনী এলাকা প্রায় 18 শতাংশ ৷ এর মধ্যে লোকসভা ভোটে যাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেন, সেই ভোটাররাও রয়েছেন ৷ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে 18 শতাংশ ভোট পাচ্ছে ৷ কিন্তু এই সমর্থন বিধানসভা নির্বাচনে মূলত আপের দিকে স্থানান্তরিত হয় ।
এই গতিশীলতার সঙ্গে যোগ হচ্ছে 10-15 শতাংশ ‘ভাসমান’ ভোটার, যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে আপের দিকে থাকেন এবং লোকসভা ভোটের সময় বিজেপিকে সমর্থন করেন ৷ এই সুইং রাজ্য স্তরে আপের আধিপত্য এবং সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির অদম্য নেতৃত্বের একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে । দিল্লির অনন্য ভোটার আচরণ তার রাজনৈতিক পরিসরের জটিলতাকে উপেক্ষা করে ৷ ফলে স্থানীয় শাসন এবং জাতীয় আখ্যান ভোটারদের ভিন্ন দিকে ঠেলে দেয় ।