কৃষি থেকে বেশি আয়ের কারণে এই বছর গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে । বর্তমান বৈশ্বিক মূল্যের সুবিধা নেওয়ার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন । বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত যত সহজে নেওয়া হয়, সেভাবেই তা শিথিল করার সিদ্ধান্তগুলিও সহজে হওয়া দরকার । খরিফ শস্যের উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশ আশাপ্রদ বলে মনে হচ্ছে ৷ কয়েকটি ফসল, বিশেষ করে সয়াবিনের নাম উল্লেখ করা যায়, এগুলির বিষয়ে রফতানি নীতি ইতিমধ্যে পরিবর্তন করতে শুরু করেছে সরকার ।
বাস্তব পরিস্থিতি বলে যে ধান ও আখের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার । ভালো ফলন হবে ধরে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাণিজ্যের বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে । এছাড়াও, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বাসমতি চাল ছাড়া অন্য চাল ও চিনির রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরও কিছুটা শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
ভোজ্য তেল : কৃষকদের স্বার্থরক্ষা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ছিল ভোজ্য তেলের আমদানি শুল্ক বাড়ানো ৷ কারণ, সয়াবিন বপন করা এলাকা স্বাভাবিকের চেয়ে 2.16 লাখ হেক্টর বেশি । দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম এমএসপি-র থেকে প্রায় 35 শতাংশ কম ছিল ৷ কারণ, প্রতি কুইন্টাল 3200 থেকে 3700 টাকার মধ্যে দাম ছিল ৷ অথচ প্রতি কুইন্টাল 4892 টাকা হল এমএসপি । এই দাম দশ বছর আগের দামের প্রায় সমান ছিল । মধ্যপ্রদেশ একটি প্রধান সয়াবিন উৎপাদনকারী রাজ্য এবং এটি কৃষিমন্ত্রীর নিজের রাজ্য ।
সরকার সয়াবিন চাষিদের এই স্বল্পমূল্যের হাত থেকে রক্ষা করতে ভালো কাজ করেছে । গত 13 সেপ্টেম্বর অশোধিত পাম তেল, অপরিশোধিত সয়াওয়েল এবং অপরিশোধিত সূর্যমুখী তেলের উপর 20 শতাংশের মৌলিক শুল্ক (বেসিক কাস্টমস ডিউটি) আরোপ করা হয়েছিল । এখনও পর্যন্ত মৌলিক শুল্ক শূন্য ছিল এবং আমদানিতে কৃষি পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেস (এগ্রিকালচার ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেস) মাত্র 5.5 শতাংশ ছিল । এখন এসব তেলের সামগ্রিক আমদানি শুল্ক হবে 27.5 শতাংশ ।
আমদানি করা পরিশোধিত পাম তেল, পরিশোধিত সয়াওয়েল এবং পরিশোধিত সূর্যমুখী তেলের মৌলিক শুল্ক এবং কৃষি পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেসের আগের হারের 13.75 শতাংশ ৷ এবার তা 35.75 শতাংশ হবে । উচ্চ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও, এগুলির বাজারে আসার শুরুর দিনগুলিতে সরকারি সংস্থাগুলি দ্বারা সংগ্রহের এখনও প্রয়োজন হতে পারে ।
বিশ্বব্যাপী সয়ামিলের দাম গত বছরের তুলনায় কম । ভারতের সয়ামিল নন-জেনেটিকালি পরিবর্তিত, কিন্তু রফতানিকারকরা এর জন্য প্রিমিয়াম পেতে সক্ষম নয় । সরকারকে গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে । ইরান, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে রফতানি সয়ামিলের দাম বাড়াতে পারে এবং এটি সয়াবিন প্রসেসরগুলিকে কৃষকদের কমপক্ষে এমএসপি প্রদান করতে সক্ষম করতে পারে ।
যদি কৃষকরা সয়াবিনের জন্য উপযুক্ত মূল্য না পান, তাহলে এটা হতে পারে যে কৃষকরা পরের বছর ধান চাষের দিকে যেতে পারে ৷ কারণ, (রাজ্য সরকার ঘোষিত বোনাসের কারণে) তারা ধানের জন্য প্রতি কুইন্টাল 3100 টাকা পাবে, যেখানে এর এমএসপি কুইন্টাল প্রতি 2183 টাকা ।
চাল : রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা সরাতে হবে
আর যে ফসল নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তা হল ধান । ভালো বর্ষার কারণে ভারতে 138 মিলিয়ন টন পর্যন্ত রেকর্ড ফলন হতে পারে । গত বছরের তুলনায় ধান চাষের পরিমাণ প্রায় 16 শতাংশ বেশি । 2023 সালে বর্ষায় কম বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও, ভারতে 136.7 মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হয়েছিল । গত 1 অগস্ট কেন্দ্রীয় ভাবে 45.5 মিলিয়ন টন চাল মজুদ করা হয়, যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ।