পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / health

ক্রমশ ভয়াবহ হচ্ছে জুনোসিস রোগ ! রক্ষা পেতে জরুরি সচেতনতা - World Zoonosis Day 2024 - WORLD ZOONOSIS DAY 2024

World Zoonosis Day: শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায়, প্রাণী বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জুনোসিস রোগের ব্যাপকতা এবং বৈচিত্র্য তাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ । যার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসচেতনতা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, কার্যকর টিকাদান কর্মসূচি প্রয়োজন । এই প্রচেষ্টার অধীনে জনগণের মধ্যে জুনোসিস রোগ সম্পর্কে তথ্য এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর 6 জুলাই বিশ্ব জুনোসিস দিবস পালিত হয় ।

Zoonosis Day News
বিশ্ব জুনোসিস দিবস (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 6, 2024, 7:52 AM IST

হায়দরাবাদ: প্রতিবছর সারা বিশ্বের অনেক মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় ৷ কখনও কখনও জুনোসিস রোগের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হয় । কোভিড 19 অতিমারী চাক্ষুষ করায় জুনোসিস রোগগুলি কতটা মারাত্মক হতে পারে আমরা জানি । এছাড়া প্রতি বছর মশা, পাখি ও পশুপাখির কারণে জলাতঙ্ক, নিপা ভাইরাস, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির মতো রোগ সংক্রমণের কারণে হাজার হাজার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে থাকে । বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক ধরনের জুনোসিস রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে । এই অবস্থায় এই ধরনের রোগ, তার লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা ও তথ্য থাকা খুবই জরুরি ।

প্রাণীর স্বাস্থ্য এবং মানুষের স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য, একে অপরের উপর তাদের প্রভাব জানার জন্য প্রাণীদের দ্বারা মানুষের মধ্যে যে রোগ ও সংক্রমণ হতে পারে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন ৷ রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করার বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি বছর 6 জুলাই জুনোসিস দিবস পালিত হয় । এটি উল্লেখযোগ্য যে এই দিনটি বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের সম্মানে পালিত হয় ৷ যিনি 1885 সালে জলাতঙ্কের জন্য প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন ।

জুনোসিস রোগ কী (What is zoonosis) ?

নয়াদিল্লির চিকিৎসক ডাঃ রবীন্দ্র দে বলেন, "জুনোসিস রোগের শ্রেণিতে সেই রোগগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । এসব রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ সম্পর্কে বলতে গেলে, পশুপাখির সরাসরি সংস্পর্শ, দূষিত জল ও খাবার এবং মশা বা টিকটিকির মতো পোকামাকড়ের কামড়ে এসব রোগ ছড়ায় ।"

তিনি ব্যাখ্যা করেন, অনেক ধরণের জুনোসিস রোগ রয়েছে যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবীর কারণে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের কিছু প্রকার নিম্নরূপ ।

  • ভাইরাল জুনোসিস: এরমধ্যে রয়েছে জলাতঙ্ক, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং করোনা ভাইরাস ।
  • ব্যাকটেরিয়াল জুনোসিস: এর মধ্যে রয়েছে সালমোনেল্লা, লাইম ডিজিজ এবং অ্যানথ্রাক্স ।
  • ছত্রাকের জুনোসিস: এর মধ্যে রয়েছে হিস্টোপ্লাজমোসিস এবং ক্রিপ্টোকোকাস ।
  • পরজীবী জুনোসিস:এর মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া, টক্সোপ্লাজমোসিস এবং স্কিস্টোসোমিয়াসিস ।
  • ভারতে প্রচলিত জুনোসিস রোগ:তিনি বলেন, "আমরা যদি ভারতে প্রচলিত জুনোসিস রোগ এবং তাদের কারণগুলির বিষয়ে কথা বলি, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ ।
  • জলাতঙ্ক: জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক ভাইরাস যা সংক্রামিত প্রাণীর (বিশেষ করে কুকুর) কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ৷ এই রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম । ভারতে জলাতঙ্কের ঘটনা খুবই সাধারণ । এই রোগ এড়াতে পশুদের টিকাদান ও সচেতনতামূলক প্রচারণা জরুরি ।
  • ব্রুসেলোসিস: এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ানো একটি রোগ যা দূষিত দুধ, মাংস বা পশুজাত দ্রব্য খাওয়ার কারণে ঘটে । এই রোগটি পশুদের (বিশেষ করে গরু এবং ভেড়া গর্ভপাত এবং প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি করে এবং মানুষের মধ্যে জ্বর, ক্লান্তি এবং পেশীতে ব্যথা হতে পারে ।
  • সালমোনেলোসিস:সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সাধারণ খাদ্যবাহিত রোগ । এটি দূষিত খাবার বা জলের মাধ্যমে ছড়ায় । এই রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, জ্বর এবং পেটে ব্যথা । এটি প্রতিরোধ করার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ।
  • বার্ড ফ্লু:এটি একটি ভাইরাল রোগ যা পাখি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । এই রোগটি ভারতে মাঝে মাঝে দেখা দেয় ৷ বার্ড ফ্লুর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট ।
  • সোয়াইন ফ্লু (H1N1): সোয়াইন ফ্লু, H1N1 ফ্লু নামেও পরিচিত ৷ একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা শুয়োরের থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । ভারতে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে । এর লক্ষণগুলি সাধারণ ফ্লুর মতো যার মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা এবং শারীরিক ব্যথা ।
  • নিপা ভাইরাস: নিপা ভাইরাস বাদুড় দ্বারা ছড়ানো একটি মারাত্মক রোগ ৷ যা ভারতের কিছু অংশে অতিমারী আকার ধারণ করেছে । এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মেনিনজাইটিস ।

কীভাবে রক্ষা করা যায় ?

ডাঃ রবীন্দ্র দে ব্যাখ্যা করেন, জুনোসিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে । এর মধ্যে প্রধান হল নিজের এবং পশুদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ৷ পশুদের স্বাস্থ্যের নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং টিকা দেওয়া ।

এছাড়া এসব রোগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও শিক্ষা বিস্তার করাও অত্যন্ত জরুরি কারণ অনেক সময় এই ধরনের রোগের লক্ষণ সম্পর্কে অজ্ঞতা মানুষের মধ্যে সমস্যা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এরজন্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে, সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে এবং গ্রাম, ছোট শহর এবং মেট্রো শহরে কমিউনিটি পর্যায়ে কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details