হায়দরাবাদ, 11 সেপ্টেম্বর: 'অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে...' সেই কবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিরদাঁড়া সোজা রাখার সহজ বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন ৷ তবে আরজি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের খুন-হত্যা কাণ্ডে অনেকেরই শিরদাঁড়া খুঁজে পেলেন না আমজনতা ৷ ন্যায় বিচার চেয়ে প্রতিবাদী আন্দোলন যখন 'রেরে' করে উঠছে ঠিক তখনই এল মাস্টার স্ট্রোক ৷ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় ফিরে আসার আহ্বান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ পুরো বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন শিল্পী চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, সোশাল মিডিয়ায় দিলেন বার্তা ৷
মঙ্গলবার সন্ধ্যের দিকে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো বার্তা দেন চন্দ্রিল ৷ কি বলছেন তিনি সেখানে? তিনি বলেন, "উৎসব কাকে বলে? যে জিনিসটাকে ঘিরে আমরা আনন্দিত হয়ে উঠি বা যে জিনিসটা আমাদের দৈনন্দিন দুঃখ-কষ্টে সাময়িক মলম লাগাতে পারে ৷ কিন্তু একজন প্রধান সমাজত্বত্ত্ববিদ উৎসবের একটি নতুন উপযোগিতা সম্পর্কে সম্প্রতি একটা তত্ত্ব সামনে এনেছেন ৷
তিনি বলছেন, উৎসব যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে প্রতিবাদ থেমে থাকতে হবে ৷ প্রতিরোধ থেমে থাকতে হবে, বিদ্রোহ থেমে থাকতে হবে ৷ ঠিক যেমন রেফারি খেলা শেষে বাঁশি বাজিয়ে দিলে তুমি আর খেলা চালাতে পারো না..... ৷ ঠিক সেই ভাবে তোমার মনের মধ্যে যত ক্ষোভই সঞ্চিত হোক না কেন, যতটাই ক্রোধ পুঞ্জিভূত থাক না কেন, সেটাকে তুমি আর উগড়ে দিতে পারবে না ৷ কারণ এবার উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে ৷"
এরপর শিল্পী আরও বলেন, "একটা প্রখর অন্যায় ঘটেছে ৷ অনেকের মনে হয়েছে সেই অন্যায়ের প্রতিকার যাঁদের করার কথা ছিল তাঁরা সেই অন্যায়ের প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছেন ৷সেই অন্যায়ের প্রধান এক হোতাকে তিরস্কৃত করার বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে ৷ ফলত, একটা সমাজ যে সকল প্রতিশ্রুতির উপর দাঁড়িয়ে থাকে, যার মধ্যে একটা প্রধান প্রতিশ্রুতি হল এই কেউ যদি অন্যায় করে তাঁকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে সেটাই লঙ্ঘিত হয়েছে ৷ সেই জন্য কিছু লোক প্রতিবাদ করেছেন ৷"
এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন পুরো বিষয় নিয়ে শাসকদল ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি, তাঁরা সহমর্মীতা দেখিয়ে বলেননি ভুল হয়ে গিয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে ৷ তার বদলে এসেছে হুমকি, শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠি চালানো হয়েছে ৷ শিল্পী বলেন, "যে পুজোয় নারীশক্তির উদ্বোধন হয়, নারী শক্তির উদযাপন হয়, নারী শক্তিকে পুজো করা হয়, সেই পুজোটাকে ব্যবহার করে ঢাকা দেওয়া হচ্ছে এমন একটা আন্দোলনকে যা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে! যা নারীর সার্বিক সম্মান বৃদ্ধির পক্ষে ৷"
এরপর তিনি কটাক্ষের সুরে উদাহরণ দিয়ে আরও অনেক কথাই বলেন ৷ সব শেষে তিনি এক আবৃতি করেন ৷ যেটাতেও মিশিয়ে দিয়েছেন সমালোচনা সুর-শব্দ ৷ কবিতায় তিনি বলেন, "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে উৎসব তাদের ঘিরে নদীসম বহে... অন্যায় প্লাস্টিকে মুড়ে উৎসবের স্রোতে ফেলে দাও, ভেসে যাবে নানান হুজ্জতে... কী স্লোগানে ফেঁপে ওঠে রাজ্যের ভাবমূর্তি? অশেষ অন্যায় হোক সঙ্গে হোক ফূর্তি৷"