প্রবীণ অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় কলকাতা, 8 ফেব্রুয়ারি: ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় 1971-72 সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত তথ্যচিত্র 'দুর্বার গতি পদ্মা'তে বাংলা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন বলিউডের হার্টথ্রব নার্গিস । আর তাঁকে এই তথ্যচিত্রে অভিনয় করতে রাজি করানোর দায়িত্ব পড়েছিল বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উপর । ঋত্বিক ঘটকের প্রয়াণ বার্ষিকীতে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে জানা গেল সে দিনের এক না-জানা ঘটনার কথা ।
প্রবীণ অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "ঋত্বিকদার জন্ম বাংলাদেশে । আর বাংলাদেশে 1971-72 সালে যে অ্যাটাক হয়, তা রেডিয়োতে জানার পর ঋত্বিকদার প্রাণ কেঁদে উঠেছিল । আমরা রেডিয়োতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ নিয়মিত শুনতাম তখন । ঋত্বিকদা আমাকে বলেছিলেন, একটা ডকু ফিল্ম বানাতে পারবি ? মানুষকে জানাতে হবে বাংলাদেশের এই অসহায়তার কথা । আমি প্রোডিউসার ছিলাম । আর ঋত্বিকদা পরিচালক । তিন দিনে স্ক্রিপ্ট রেডি করেছিলেন । ঠিক করলেন নার্গিসকে বাংলা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করাবেন ।"
তবে নার্গিস প্রথমে এই ফিল্ম করতে রাজি ছিলেন না বলে জানালেন প্রবীণ অভিনেতা ৷ তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "নার্গিস ভাভি (বিশ্বজিৎ নার্গিসকে ভাভি সম্বোধন করতেন) তখন অফিসিয়ালি অবসর নিয়েছেন অভিনয় থেকে। আমি আর্জি জানালে প্রথমে রাজি হননি তিনি । কারণ তিনি অফিসিয়ালি রিটায়ার করেছেন । এরপর আমি বাংলাদেশের করুণ দুর্দশার কথা বলি ওনাকে । বলি, ঋত্বিকদা বানাচ্ছেন ডকু ফিল্মটা । ঋত্বিকদার কথা শুনেই নার্গিস ভাভির মন গলে । বড় শ্রদ্ধা করতেন ঋত্বিকদাকে । তাই তাঁর কথা শুনে আর না করতে পারেননি নার্গিস ভাভি । ঋত্বিক ঘটককে কেউই 'না' করতে পারতেন না ।"
অভিনেতার কাছ থেকেই জানা গেল যে, ঋত্বিক ঘটক তথ্যচিত্রের বিষয় সম্বন্ধে অভিনেত্রীকে বলেন যে, তিনি এই কাজটা করলে বহু মানুষের আশীর্বাদ পাবেন । নার্গিস সব শুনে অবশেষে রাজি হয়ে যান । তবে, তিনি একটি শর্ত রাখেন যে, তাঁর বাড়িতেই শুটিং করতে হবে । কারণ অন্য জায়গায় শুটিং করলেই সাংবাদিকরা আসবেন । তাঁর অনুরোধে তাঁর বাড়ির বাগানেই শ্যুটিং হয় । বলিউডের হার্টথ্রব অভিনয় করেন ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায়, বাংলা মায়ের চরিত্রে । বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় সেখানে অভিনয় করেন একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে ।
বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় আরও বলেন, "ঋত্বিক ঘটক কত বড় মাপের চিত্রনির্মাতা তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না । কত কিছু শিখেছি মানুষটার কাছ থেকে । কী জানতেন না ? জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিল ওঁর কাছে । চলতা ফিরতা এনসাইক্লোপিডিয়া যাকে বলে । আমি 'ম্যাড জিনিয়াস' বলতাম ঋত্বিকদাকে । কারণ বড্ড খামখেয়ালি আর মুডি ছিলেন । ক্ষণে ক্ষণে মুড চেঞ্জ হত । জীবনটা বড় এলোমেলো ছিল। মুম্বইতে একটা সময়ে আমার বাড়িতে থাকতেন ঋত্বিকদা । অনেককিছু শিখেছি ওঁর কাছ থেকে । বেঁচে থাকলে আরও অনেক ছবি করতে পারতেন । 'সংসার সীমান্তে' ছবিটা তাঁরই করার কথা ছিল । স্ক্রিপ্টটা তাঁর করা ছিল । ঋত্বিকদার সঙ্গে সবকিছু ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল আমার, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের আর হেমন্তদার । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজটা ঋত্বিকদার বদলে করলেন তরুণ মজুমদার । ঋত্বিকদার আর করা হয়নি ৷"
আরও পড়ুন:
- লতার পাশে বসে নিজের প্রথম হিন্দি ছবি দেখেছিলেন, সুরসম্রাজ্ঞীর স্মৃতিচারণায় বিশ্বজিৎ
- বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছবিতে বীর সেনার ভূমিকায় জ্যাকি শ্রফ, গল্পে থাকছে নারীশক্তির কথাও
- বহু পুরনো দিনের গান থাকবে ছবিতে, পরিচালনায় ফিরে অকপট বিশ্বজিৎ