বর্ধমান, 6 ডিসেম্বর: নতুন আলু বাজারে আসতে জানুয়ারি মাসের 10 থেকে 15 তারিখ হতে পারে। ফলে পুরোনো আলুর উপরেই এখনও প্রায় মাস খানেকের বেশি সময় নির্ভর করতে হবে। ফলে কোনও অবস্থাতেই সরকার ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতে দেবে না। জেলা প্রশাসনও নজরদারি চালাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পরে বৃহস্পতিবার থেকে ফের বাজারে আলু আসার কথা থাকলেও বাজারে আলু সেভাবে পাওয়া যায়নি। ফলে আলুর দাম আজও ঊর্ধ্বমুখী।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে আলু পাঠানো আটকানো না গেলে রাজ্যে আলুর দাম আরও বাড়বে। কিন্তু, হিমঘর মালিকদের সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীদের বোঝাপড়ায় ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ । রাজ্য সরকার তাই আলু পাচার রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেয়।
হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা এক মাস বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। 30 নভেম্বর হিমঘরে আলু রাখার শেষ দিন থাকলেও সেই সময়সীমা 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে । কৃষি বিপণন দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, বাজারে নতুন আলু না আসা পর্যন্ত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের যোগান অনুযায়ী হিমঘরে আলু রাখা যাবে। সাধারণত, প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু করে 30 নভেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখা হয়। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার সময়সীমা বাড়িয়ে থাকে। তবে যোগানের বেশি আলু ভিন রাজ্যে রফতানি করতে গেলে ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, বিহার, অসম, ছত্তিশগড় সীমান্তে পুলিশ আলুর ট্রাক আটকে দেয়। প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকে ব্যবসায়ীরা। পরে সরকারের আবেদনে সাড়া দিলে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট তুলে নেয়। কিন্তু, জটিলতা রয়েই গিয়েছে ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে এবছর আলু চাষ শুরু করতে দেরি হয়েছিল। অন্যান্য বছর 25 ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে নতুন আলু চলে আসে। কিন্তু, এবার যেহেতু দেরি করে আলু লাগানো হয় ফলে নতুন আলু বাজারে আসতে আসতে প্রায় জানুয়ারি মাসের 10 থেকে 15 তারিখ হয়ে যাবে। এছাড়া, অন্যান্য বছরে দেখা যায় নতুন আলুর আমদানি হলে পুরোনো আলুর চাহিদা কমে যায়। ফলে পুরোনো আলুর দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু, এবারের পরিস্থিতি অন্যরকম। যেহেতু, নতুন আলু বাজারে আসতে দেরি আছে, তাই পুরোনো আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী ।
চলতি বছরে আলু ব্যবসায়ীরা দুবার কর্মবিরতির পথে হেঁটেছে। তাদের দাবি, ভিন রাজ্যে আলু রফতানির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িষ্যা, ছত্রিশগড়, অসম সীমান্তে পুলিশের জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে। এদিকে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘাতের জেরে বাজার থেকে আলু উধাও। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিন বর্ধমানের বাজারগুলিতে জ্যোতি আলু কেজিতে 36 টাকা থেকে 38 টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। চন্দ্রমুখী আলুর দাম ছিল কেজিপ্রতি 40 টাকা ।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ছয় লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। প্রতিদিন গড়ে রাজ্যে 18 হাজার মেট্রিক টন আলু প্রয়োজন হয়৷ অন্যান্য বছরে ডিসেম্বর মাসের 25 তারিখের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসে। চলতি মাসে সেই আলু পাওয়া যাবে না। এখনও নতুন আলু পেতে আরও দিন পনেরো সময় লাগবে। অর্থাৎ, হিসাব অনুযায়ী নতুন আলু বাজারে আসবে জানুয়ারি মাসের 10 থেকে 15 তারিখের মধ্যে। এর ফলে মজুত থাকা আলুর উপরেই রাজ্যবাসীকে নির্ভর থাকতে হবে। ফলে মজুত থাকা আলু যাতে কোনও ভাবেই ভিন রাজ্যে না যায়, সেই বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখার্জি বলেন, "রাজ্যের জন্য আলু প্রয়োজন চার লক্ষ মেট্রিক টন। অথচ, রাজ্যে সাড়ে ছয় লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। ফলে বাকি আড়াই লক্ষ টন আলু ভিন রাজ্যে পাঠানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে মন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছেন। আর এই নিয়ম তো প্রথম থেকেই চলে আসছে। এই অতিরিক্ত আলু যদি ভিন রাজ্যে না পাঠানো যায়, তাহলে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।"