পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

স্বামীর প্রাণ কেড়েছিল দাঙ্গা, 23 বছর পর ফেব্রুয়ারিতেই মৃত্যু স্ত্রী জাকিয়ার - ZAKIA JAFRI

গুজরাত দাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছিল কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির। ঘটনাচক্রে সেই ফেব্রুয়ারি মাসেই মৃত্যু হল স্ত্রীর। স্বামীর মৃত্যুতে ন্যায় বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই লড়েছেন জাকিয়া।

zakia-jafri
Etv Bharat (ইটিভি ভারত)

By PTI

Published : Feb 1, 2025, 5:27 PM IST

আমেদাবাদ, 1 ফেব্রুয়ারি:প্রয়াত হলেন জাকিয়া জাফরি । শনিবার সকালে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। বয়স হয়েছিল 86। স্বামী এহসান জাফরি ছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ। 2002 সালের গুজরাত দাঙ্গায় তাঁর প্রাণ গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে সেদিনও পেশ হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাজেট ।

আমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন এহসান জাফরি। আচমকা ফেব্রুয়ারি মাসের 28 তারিখ উন্মত্ত ভিড়ের হামলায় ওই সোসাইটির 69 জনের প্রাণ যায়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এহসানও । আর এবার সেই ফেব্রুয়ারিতেই প্রাণ হারালেন জাকিয়া জাফরি। এর ঠিক একদিন আগে গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরায় ভয়াগহ আগুন লাগে। তাতে মৃত্যু হয় 59 জন করসেবকের । কয়েকঘণ্টার মধ্যে আমেদাবাদা-সহ গুজরাতের বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

গত দু'দশকে বাববার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন জাকিয়া। স্বামীর মৃত্যুর জন্য দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, তাঁর স্বামী-সহ বাকিদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে একেবারে শীর্ষ স্তরে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা আছে। নিজের দাবিকে সামনে রেখে একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ছেলে তনভির জাফরি বলেন, "এদিন সকালে মাসির বাড়ি গিয়েছিলেন মা। সকলের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিলেন। আচমকাই তাঁর শরীর খারাপ হতে থাকে । চিকিৎসক এসে দেখেন। পরে সকাল 11.30টা নাগাদ তিনি মা-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।

গুজরাত দাঙ্গায় বিচার চেয়ে জাকিয়ার মতো বারবার শিরেনামে এসেছেন তিস্তা সেতলওয়াড়। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে জাফরির মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন তিস্তা। তিনি লেখেন, " জাকিয়ার অভাব তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের পাশাপাশি গোটা বিশ্ব অনুভব করবে। তানভিরভাই, নিশরিন, দুরাইয়াপ্পা, আমরা আপনাদের পাশে আছি ।"

16 বছরের আইনি লড়াই

2006 সালে গুজরাত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জাকিয়া দাবি করেন এই হামলার নেপথ্যে বড় ধরনের ষডযন্ত্র আছে। তারই অংশ হিসেবে দাঙ্গা থামাতে প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। তাছাড়া নেতারা লাগাতার এমন সমস্ত বক্তব্য় পেশ করেছেন যাতে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

শুধু তাই নয়, সরাসরি গুজরাতের তৎকালীন মূুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিযুক্ত করেন। জাকিয়ার দাবি ছিল, মোদি প্রশাসন দাঙ্গা থামাতে সেনা নামাতে ইচ্ছা করে দেরি করেছে। আর ঠিক সেই কারণে মোদির নাম মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভক্ত করার দাবিও তুলেছিলেন। হাইকোর্ট তাঁর দাবি খারিজ করে দিলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন জাকিয়া । সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত হয় বিশেষ তদন্তকারী দল।

তদন্ত করার পর 2012 সালে মোদিকে ক্লিনচিট দেয় সিট। তদন্তকারী জানান, মোদি-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ তোলা হয়েছে তার স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই। আর তাই তদন্ত বন্ধ করতে আমেদবাদের নিম্ন আদালতে ক্লোজার রিপোর্ট জমা দেয় সিট। হাল ছাড়তে নারাজ জাকিয়া নিম্ন আদালতে সিটের তদন্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-পত্র জমা দেন।

বিচারক সেই আবেদন খারিজ করলে 2017 সালে আবারও গুজরাত হাইকোর্টেকর দ্বারস্থ হন । সেখানেও তাঁকে ধাক্কা খেতে হয়। এরপর সিটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন জাকিয়া। এবারও মেলেনি সাফল্য । 2022 সালের 24 ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালত গুজরাতের হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। বিচারপতি এএম খানউইলকরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানায়, এই মামলায় তদন্তের আর কিছু বাকি নেই । সেদিক থেকে সিটের ক্লোজার রিপোর্ট গ্রহণ করে ঠিকই করেছে হাইকোর্ট।

ABOUT THE AUTHOR

...view details