পুরী, 14 জুলাই: ঘড়ির কাঁটায় দুপুর 1টা 28 মিনিট ৷ রবিবার 46 বছর পর খুলে গেল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের দরজা ৷ আজ কেবল রত্ন ভাণ্ডার পরিদর্শন করা হবে । এই রত্ন ভাণ্ডার দ্বাদশ শতকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কোষাগার ৷ মূল্যবান জিনিসপত্রের একটি তালিকা তৈরি এবং কোষাগারের কাঠামো মেরামতের জন্য 46 বছর পর পুনরায় আজ খোলা হয়েছে রত্ন ভাণ্ডারটি ৷ এমনটাই মন্দিরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন । কোষাগারটি শেষবার 1978 সালে খোলা হয়েছিল ।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি সোশাল মিডিয়ায় রত্ন ভাণ্ডার খোলা নিয়ে পোস্ট করেছেন । সেখানে তিনি লিখেছেন, "জয় জগন্নাথ ! আপনাদের আশীর্বাদে আজ 46 বছর পর একটি মহৎ উদ্দেশ্যে রত্ন ভাণ্ডার খোলা হয়েছে । আমার দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এই প্রচেষ্টা সফল হবে ৷"
রত্ন ভাণ্ডারের ভিতরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে ৷ সেই কমিটির মাথায় রয়েছেন বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ । পুরীতে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এই রত্ন ভাণ্ডার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তালা ভেঙে হলেও এই রত্ন ভাণ্ডার খোলার কথা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে ৷
শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের (এসজেটিএ) প্রধান প্রশাসক অরবিন্দ পাধী-সহ কমিটির সদস্যরা পুনরায় খোলার পরে কোষাগারটি খতিয়েে দেখবেন। এর আগে মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই জায়গাটি চিহ্নিত করেছিল যেখানে রত্ন ভাণ্ডার খোলার পর অস্থায়ীভাবে মূল্যবান জিনিসগুলি রাখা হবে । রত্ন ভাণ্ডার পুনরায় খোলার আগে অনুমতি চাওয়া হয় ৷ তার জন্য 'অগ্ন্য'-এর আচার-অনুষ্ঠান সকালে সম্পন্ন হয়েছে । আচার অনুষ্ঠানের পরে কোষাগারটি খোলা হয় ৷
কমিটির সদস্য সিবিকে মোহান্তি জানান, রত্ন ভাণ্ডার খোলার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের তরফে গঠিত কমিটির সদস্যরা ঐতিহ্য মেনে পোশাক পরে দুপুর 12টার দিকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করেন ৷ কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি রথ বলেন, "কোষাগারটি পুনরায় খোলার আগে আমরা দেবী বিমলা ও দেবী লক্ষ্মীর অনুমতি চেয়েছিলাম ৷ তাঁরা এই কোষাগারের মালিক ৷ সবশেষে রত্ন ভাণ্ডার খোলার জন্য ভগবান লোকনাথের অনুমতি চাওয়া হয় ৷ তিনি এই কোষাগারের তত্ত্বাবধায়ক ৷"
এদিন সকালে বিচারপতি রথ-সহ কমিটির সদস্যরা রত্ন ভাণ্ডার খোলার কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য গুন্ডিচা মন্দিরে ভগবান জগন্নাথ এবং তাঁর ভাইবোনদের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন । পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) তৈরি করা হয়েছে । অরবিন্দ পাধী বলেছেন, "তিনটি এসওপি তৈরি করা হয়েছে। একটি রত্ন ভাণ্ডার পুনরায় খোলার সঙ্গে সম্পর্কিত, দ্বিতীয়টি অস্থায়ী রত্ন ভাণ্ডারের পরিচালনার জন্য এবং তৃতীয়টি মূল্যবান জিনিসপত্রের তালিকার সঙ্গে জড়িত ।"
তাঁর কথায়, "রত্ন ভাণ্ডারে কী কী রয়েছে আজ থেকে তা গোনার কাজ শুরু হবে না। স্বর্ণকার এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পরই সেটি হবে ৷ রাজ্য সরকার রত্ন ভাণ্ডারে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্রের একটি ডিজিটাল ক্যাটালগ প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ সেখানে থাকা রত্নের ওজন এবং কীভাবে সেগুলি তৈরি করা হয়েছে এর মতো বিশদ বিবরণ থাকবে ৷"
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) সুপারিনটেনডেন্ট ডিবি গদানায়েক বলেছেন, "স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা মেরামতির জন্য রত্ন ভাণ্ডার পরিদর্শন করেছেন ।" ওড়িশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (ওডিআরএএফ) কর্মীদের রত্ন ভাণ্ডারের আলো নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছে । আলোগুলি রত্ন ভাণ্ডারের ভিতরে লাগানো হবে ৷
কোষাগারের ভেতরে সাপ রয়েছে বলেও কথিত আছে । স্নেক হেল্পলাইনের সদস্য শুভেন্দু মল্লিক বলেন, "রাজ্য সরকারের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি । সাপ ধরার দু'টি দল প্রস্তুত রয়েছে এখানে ৷ একটি মন্দিরের ভিতরে এবং অন্যটি মন্দিরের বাইরে। আমরা প্রশাসনের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলছি।"