হায়দরাবাদ, 5 ফেব্রুয়ারি:মৃত্যুর খবর রটিয়েআচমকাই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন মডেল তথা অভিনেত্রী পুনম পাণ্ডে ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারের মতো মারণরোগে মৃত্যুর খবর সোশাল মিডিয়ায় উঠে আসতেই তা ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি ৷ আর এখানেই দেখা যাচ্ছে বিপদের সংকেত ৷ প্রশ্ন উঠছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অভিনেত্রীর মৃত্যু নিয়ে রটনা নাকি ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার প্রবণতা ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই এর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের তরফে কথা বলা হয় ফ্যাক্ট-চেকিং এক্সপার্ট মুরলিকৃষ্ণান চিন্নাদুরাইয়ের সঙ্গে ৷
ইটিভি ভারত: একজন ফ্যাক্ট-চেকার হিসাবে সোশাল মিডিয়ায় পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর ঘটনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
চিন্নাদুরাই: প্রথমত এই খবরটা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পেজে ৷ এই সংক্রান্ত খবর আর কোথাও কিন্তু ছিল না ৷ এমনকী, কোনও মেডিক্যাল তথ্যও এর সঙ্গে দেওয়া হয়নি ৷ একজন মডেল যিনি তিনদিন আগে রেড কার্পেটে হেঁটেছেন, তিনি আচমকা সার্ভাইকাল ক্যানসারে মারা গেলেন, এই বিষয়টা এত সহজে মেনে নেওয়া যায় না ৷ তাও যেহেতু খবরটি মডেলের ব্যক্তিগত ইনস্টা হ্যান্ডেলে প্রকাশিত হয়েছে, তাই সকলেই এই ঘটনাকে নিয়ে খবর করেন ৷ আর প্রশ্নটা এখানেই ৷ কোনওভাবেই এই খবরের সত্যতা যাচাই করা হয়নি ৷ কোনও তথ্য বা প্রমাণ চেক করা হয়নি ৷ তাঁর মৃ্ত্যুর খবরে কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখা হয়নি, এমনকী তাঁর দেহ কোথায় রাখা হয়েছে, তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি ৷ এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ৷
ইটিভি ভারত:তাহলে এই মিথ্যে খবরের ফ্যাক্ট-চেক করতে এত সময় লাগল কেন?
চিন্নাদুরাই:আসলে ফেক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে 2 ফেব্রুয়ারি সকালে পুনম পাণ্ডের মৃ্ত্যুর খবর সামনে আনা হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁর মৃ্ত্যুর খবর নিয়ে পরিবারের কোনও সদস্যের প্রতিক্রিয়া আসেনি ৷ পাশাপাশি অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করা হয়নি ৷ এমনকী তাঁর বন্ধু মুনাওয়ার ফারুকিও এই ঘটনা শুনে নিজের সোশাল পেজে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন ৷ বিকেল 4টে পর্যন্ত মৃত্যু নিয়ে কোনওরকম তথ্যপ্রমাণ সামনে আসেনি ৷ এরপর একটি ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে মুম্বইয়ের একজন ফ্যাক্ট-চেকার এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ তিনি পুনমের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ৷ কিন্তু কোনওভাবেই সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না পুনমের মৃত্যু নিয়ে ৷ এই ধরনের ফেক খবরকে 'পোস্ট ট্রুথ' বলা হয় ৷ এর মানে যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই নিয়ে কোনও রকম মুখ খুলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না ৷
ইটিভি ভারত:পুনম পাণ্ডে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর মিথ্যে মৃত্যুর খবর রটিয়েছেন সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৷ এটাকে পজিটিভ দিক থেকে দেখা যাবে না কেন?
চিন্নাদুরাই:এটাকে কোনওভাবেই পজিটিভভাবে দেখা যাবে না ৷ উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এই ট্যাকটিকস ফান্ডামেন্টালি ত্রুটিপূর্ণ ৷ কারণ এই ধরনের ঘটনা যখনই ছড়িয়ে পড়ছে তখনই যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত তাঁদের মধ্যে বাঁচার আশা কমে যেতে পারে ৷ যদি সত্যিই সচেতনতা বাড়াতে হয়, তাহলে সত্যের পথ গ্রহণ করা উচিত ৷ মৃত্যুর মতো ঘটনাকে সামনে আনায় তা খারাপ প্রভাব ব্যক্ত করে ৷
ইটিভি ভারত: গুজব এবং অপপ্রচার ৷ এই দু'টোর মধ্যে তফাৎ কী? কোথায় রয়ে যাচ্ছে সূক্ষ্ম পার্থক্য?
চিন্নাদুরাই:আসলে গুজব হল মিথ্যা খবর ছড়ানো, যা একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে করছেন ৷ আর বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান হল এমন এক পদ্ধতি যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও প্রচারের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে ৷ পুনম পাণ্ডের এই ঘটনা অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে আসতে তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই খবর নানাভাবে প্রভাবিত করেছে সকলকে ৷