পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বিয়ের আগে ‘হবু’কে যাচাইয়ে চাহিদা বাড়ছে বেসরকারি গোয়েন্দাদের, খরচ জানেন? - INDIANS HIRING WEDDING DETECTIVES

ভারতে বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাদের রমরমা ৷ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বউ বা বরের বিষয়ে খোঁজ নিতে গোয়েন্দা ভাড়া করছে পরিবার থেকে দম্পতি ৷

Indians Hiring Wedding Detectives
বিয়ের আগে হবু বউ বা বরের উপর গোয়েন্দাবৃত্তি বাড়ছে ভারতে (ছবি সূত্র-সংবাদ সংস্থা এএফপি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 7 hours ago

নয়াদিল্লি, 23 ডিসেম্বর: দু’টি পরিবার মিলে দেখেশুনে পাত্র-পাত্রীর বিয়ে দেবে ৷ সেই দিন প্রায় শেষের পথে ৷ এখন নিজে দেখে বিয়ের যুগ ৷ যতদিন যাচ্ছে তাই প্রেম করে বিয়ের চল দিন দিন বাড়ছে ৷ কিন্তু কোথাও হয়তো ছেলে-মেয়ের ভালোবাসার মানুষকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারছেন না বাবা-মা ৷ তাঁদের চিন্তা বাড়ছে ৷ তাই তো তারা শরণাপন্ন হচ্ছেন গোয়ান্দাদের ৷ আর এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে ভারতীয়দের মধ্যে ৷

হ্যাঁ, অবাক হলেও এটাই সত্যি ৷ অল্পবয়সি প্রেমিক-প্রেমিকা যখন বিয়ের মতো বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইছেন, তখন তাঁদের পরিবার পুরোহিতের বদলে দ্বারস্থ হচ্ছেন গোয়েন্দাদের ৷ আবার যে সে গোয়েন্দা নয়, যাঁরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দাগিরি করতে পারবেন, তাঁদের কাছে যাচ্ছে বিভিন্ন পরিবার ৷

আর তাই তো এখন ভারতে বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাদের রমরমা ৷ এমনই এক গোয়েন্দা হলেন দিল্লির ভাবনা পালিওয়াল ৷ নয়াদিল্লির এক মলের একটি বেনামী অফিস থেকে তিনি গত 20 বছর ধরে তাঁর এজেন্সি চালাচ্ছেন ৷ 48 বছর বয়সি ভাবনার সংস্থার নাম তেজস ডিটেকটিভ এজেন্সি ৷ ভাবনা পালিওয়াল জানাচ্ছেন, তিনি ওই বেনামী অফিস থেকেই হবু বর বউয়ের উপর নজর রাখেন ৷ ভারতে বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি একটি বিকাশমান শিল্প ৷ কারণ, এখন তরুণ প্রজন্ম অ্যারেঞ্জের বদলে লাভ ম্যারেজের দিকে বেশি ঝুঁকছে ৷

স্বামীর উপর গোয়েন্দাগিরি মহিলার:এই গোয়েন্দা বলেন, "ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক ভালো চলছে এখন । আমার টিম প্রতি মাসে প্রায় আটটি বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরির কেস নেয় । সম্প্রতি একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে আমাদের দ্বারস্থ হন ৷ তদন্তে ধরা পড়ে মহিলার স্বামী বেতন নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন ৷ লোকটি স্ত্রীকে বলেছিলেন যে, তিনি বছরে প্রায় 70 হাজার 700 মার্কিন ডলার আয় করেন ৷ কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি বছরে 7070 মার্কিন ডলার টাকা উপার্জন করেন ।"

হবু জামাইয়ের উপর নজরদারি: নয়াদিল্লির এক অফিস কর্মী শীলার (নাম পরিবর্তিত) কথায়, তাঁর মেয়ে প্রেমিককে বিয়ে করতে চাওয়ার পর তিনি ভাবনা পালিওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মেয়ের প্রেমিকের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার কথা বলেন৷ শীলা বলেন, "আমার বিয়ে নিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল ৷ আমি চাইনি তেমনটা আমার মেয়ের সঙ্গে হোক ৷ যখন আমার মেয়ে বলল যে সে প্রেমিককে বিয়ে করতে চায়, তখন আমি তাঁকে সমর্থন করতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু ছেলেটির সম্বন্ধে সঠিক যাচাই ছাড়া আমি তাঁদের বিয়ে দিতে চাইনি ।"

বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরিতে খরচ:একজন গোয়েন্দা নিয়োগ করতে 100 থেকে 2 হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে ৷ তবে অবশ্যই এই খরচ নির্ভর করবে গোয়েন্দাবৃত্তির উপর । আপনি কী ধরনের খোঁজ খবর চাইছেন, তার উপর ভিত্তি করে ধার্য হবে খরচের বিষয়টি ৷

তবে শুধু ছেলে-মেয়েদের জন্য চিন্তিত বাবা-মা নয়, হবু বর বা বউ সঙ্গীর বিষয়ে খোঁজখবর নেন ৷ তাদের সম্পর্কে যাচাই করার চেষ্টা করছেন । কেউ কেউ তাঁদের হবু স্বামী বা স্ত্রীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করতে উদ্যত হচ্ছেন ৷ অথবা, বিয়ের পরে স্বামী বা স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে সন্দেহের বশে গোয়েন্দাদের নিয়োগ করছেন ৷

বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি সমাজসেবা:51 বছর বয়সি বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দা সঞ্জয় সিং ৷ তাঁর দাবি অনুযায়ী, তাঁর এজেন্সি শুধুমাত্র এই বছরেই বিয়ের আগে শতাধিক পাত্র-পাত্রীর তদন্ত করেছে ৷ অর্থাৎ প্রাক-ম্যাট্রিমোনিয়াল ইনভেস্টিগেশন পরিচালনা করেছে ৷ তাই সঞ্জয় সিংয়ের কথায়, বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি সমাজের জন্য একটি সেবা ৷

অন্যদিকে গোয়েন্দা ভাবনা পালিওয়ালের মতে, বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি একটি বিচক্ষণ কাজ । তাঁর অফিসটি শহরের একটি মলে বেনামি সাইন বোর্ডের আড়ালে চলছে ৷ যাতে জ্যোতিষীর বাড়ি বলে লেখা ৷ কারণ, অনেক ক্লায়েন্টরা চায় না যে লোকেরা জানুক যে তাঁরা একজন গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা করছেন ৷

সমকামিতা নিয়ে গোয়েন্দাগিরি:আরও এক গোয়েন্দা আকৃতি খাত্রী বলছেন, "আমার ভেনাস ডিটেকটিভ এজেন্সিতে প্রায় এক চতুর্থাংশ মামলা আসে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী যাচাই সংক্রান্ত । এমনকি এমন কিছু লোক আসেন যারা জানতে চায় বর সমকামী কি না ।"

তবে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে যাচাই আজকের বিষয় নয়, বহু বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে ৷ পার্থক্য়টা এখানেই আগে পরিবারের সদস্যরা, পুরোহিত বা ঘটককে দিয়ে পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে যাচাই করা হতো ৷ এখন সেটাই হচ্ছে গোয়েন্দাদের দিয়ে ৷ যার জন্য মানুষ বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারস্থ হচ্ছেন ৷

সঞ্জয় সিং বলেন, "অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এখন ম্যাচমেকিং ওয়েবসাইট বা এমনকি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমেও অনলাইনে হয় । তাই পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে যাচাই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখন ৷ বিবাহসংক্রান্ত গোয়েন্দাগিরি কাজেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে ৷"

আকৃতি খাত্রী তাঁর এজেন্টদের সরাসরি অনলাইনে রেকর্ড আপলোড করার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করতে টেক ডেভেলপারদের ব্যবহার করেছেন ৷ যাতে এজেন্টদের ফোনে কিছু না-রাখতে হয় ৷ তারা ধরা পড়লে ফোনে কিছু পাওয়া যাবে না । তিনি বলেন, ‘‘এটি আমার দলের জন্য নিরাপদ ৷ এটি তাদের কম সময় এবং কম খরচে ভালো ফল পেতে সাহায্য করছে । মাত্র কয়েক ডলার থেকে শুরু হয় এই নজরদারি সরঞ্জামগুলি, যা সহজেই উপলব্ধ ।

এর মধ্যে অডিয়ো এবং ভিডিয়ো রেকর্ডিং ডিভাইসগুলি রয়েছে ৷ যেমন মশা তাড়ানোর সকেট ডিভাইস, আরও অত্যাধুনিক চৌম্বকীয় জিপিএস গাড়ি ট্র্যাকার বা পরিধানযোগ্য ছোট ক্যামেরা । ভাবনা পালিওয়াল বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত উন্নতি আমাদের সম্পর্ককে চাপে ফেলেছে । আমরা যত বেশি হাই-টেক হব, আমাদের জীবনে তত বেশি সমস্যা বাড়বে ৷"

তাঁর কথায়, "প্রযুক্তি বা গোয়েন্দাদের কাউকেই স্বামী বা স্ত্রীর প্রতারণা প্রকাশ করার জন্য দোষ নেওয়া উচিত নয় । এই ধরনের সম্পর্ক এমনিতেই স্থায়ী হতো না । মিথ্যার উপর ভিত্তি করে কোনও সম্পর্ক চলতে পারে না ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details