পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sukhibhava

কোভিড থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কী করবেন

সার্স-কোভ 2 এর নানা ধরনের প্রজাতির উদ্ভব এই উদ্বেগকে ক্রমশ বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তাদের উপর হয়তো ইতিপূর্বের কোনও সংক্রমণ বা টিকাকরণের ফলে পাওয়া ইমিউন রেসপন্স কাজ করবে না । আর একটি নয়া সমীক্ষার ফলে ইমিউন রেসপন্সে এমনই একটি মুখ্য চরিত্রের কথা জানা গিয়েছে, যার উপর কোনও প্রভাব পড়ে না ।

By

Published : Apr 2, 2021, 10:58 PM IST

টি কোষসমূহ কোভিড সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা মানুষদের মধ্যে কোভিডের নানা প্রজাতি শনাক্ত করতে পারে : সমীক্ষা
টি কোষসমূহ কোভিড সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা মানুষদের মধ্যে কোভিডের নানা প্রজাতি শনাক্ত করতে পারে : সমীক্ষা

নিউইয়র্ক, 2 এপ্রিল :সার্স-কোভ 2 এর নানা ধরনের প্রজাতির উদ্ভব এই উদ্বেগকে ক্রমশ বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তাদের উপর হয়তো ইতিপূর্বের কোনও সংক্রমণ বা টিকাকরণের ফলে পাওয়া ইমিউন রেসপন্স কাজ করবে না । আর একটি নয়া সমীক্ষার ফলে ইমিউন রেসপন্সে এমনই একটি মুখ্য চরিত্রের কথা জানা গিয়েছে, যার উপর কোনও প্রভাব পড়ে না ।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর (এনআইএআইডি) গবেষকরা দেখেছেন যে সার্স কোভ-2 এর প্রতি ইমিউন রেসপন্সে সেই মুখ্য চরিত্র হল CD8+ T কোষ । এই কোষটিই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে ।

এই সম্ভাবনাকে আরও তদন্ত করে দেখার জন্য গবেষক দলটি এমন ৩০ জন মানুষের রক্তের কোষের নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেছিলেন, যারা এই কোভিড ভাইরাসের নানা প্রজাতির উদ্ভবের আগে কোভিড-19 থেকে সেরে উঠেছিলেন ।

গবেষকরা প্রশ্ন করেছিলেন যে, আগের কোভিড-19 থেকে সেরে ওঠা মানুষদের রক্তে এই CD8+ T কোষগুলি কি কোভিড-19 এর তিনটি প্রজাতি, ‘বি.1.1.7’ যা ব্রিটেনে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল, ‘বি.1.351’ যা পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ‘বি.1.1.248’, যা প্রথম দেখা গিয়েছিল ব্রাজিলে ।

গবেষকরা জানিয়েছিলেন যে, প্রতিটি প্রজাতির মিউটেশন ঘটেছে এবং নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন এলাকায় মিউটেশন হয়েছে, যার মাধ্যমে এরা অন্য কোষের কাছাকাছি আসে এবং কোষে প্রবেশ করে ।

স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন বলে তা একে টি সেলগুলির কাছে শনাক্তকরণে অনুপযোগী করে তোলে এবং অ্যান্টিবডিগুলিকে নিরপেক্ষ করে তোলে । এটা হয় ইমিউন সিস্টেমের বি সেলের মাধ্যমে কোনও সংক্রমণ বা টিকাকরণের পর । গবেষকরা এটাই বলেছেন ।

আরও পড়ুন :এই ব্যায়মগুলোর সাহায্যে চনমনে থাকুন গরমে

যদিও অ্যান্টিবডি এবং টি সেলের প্রতিক্রিয়ার যথাযথ মাত্রা এবং উপাদান, যা সার্স-কোভ 2 সংক্রমণ থেকে ইমিউনিটি পেতে দরকার, এখনও অজানা । তাই গবেষকরা ধরে নিয়েছেন যে অ্যান্টিবডি এবং টি সেল থেকে কড়া এবং চড়া প্রতিক্রিয়া দরকার সক্রিয় ইমিউন রেসপন্স পাওয়ার জন্য ।

CD8+ T সেলগুলি সংক্রমণকে কোণঠাসা করে দেয় সংক্রামিত কোষপৃষ্ঠের উপর থাকা ভাইরাস প্রোটিনের অংশ শনাক্ত করার মাধ্যমে এবং তারপর তাকে মেরে ফেলার মাধ্যমে ।

সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড-19 রোগীদের উপর সমীক্ষায় গবেষকরা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে সার্স-কোভ 2 নির্দিষ্ট CD8+ T কোষের প্রতিক্রিয়া মোটামুটিভাবে নিষ্ক্রিয়ই থাকে এবং ভাইরাসের সমস্ত প্রজাতিতে হওয়া মিউটেশনকে এরা শনাক্ত করতে পারে ।

যেখানে এই নিয়ে বৃহত্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে, সেখানেই গবেষকরা সমীক্ষায় দেখেছেন যে, টি সেলের প্রতিক্রিয়া সেরে ওঠা মানুষজন এবং সর্বোপরি ভ্যাকসিনের উপর, তিনটি ভাইরাস প্রজাতির উপর হওয়া মিউটেশন দ্বারা মোটেই প্রভাবিত নয় । আর তাই এটি নতুন নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম ।

ওয়ার্ক ফ্রম হোমে খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিন

আমাদের জীবনে যে কোটি কোটি অনেক কিছু এই প্যানডেমিকের কারণে বদলে গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল খাওয়াদাওয়া । আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ধরনই এই প্যানডেমিকে বদলে গিয়েছে । তবে তা বিভিন্ন ধরনের মানুষের জন্য বিভিন্ন রকম অর্থবহ ।

আমাদের মধ্যে যেখানে অনেকেই বাড়িতে থাকা সময়কে রান্না করা, বেকিং করায় কাটিয়েছেন এবং এর জন্য বাইরে থেকে খাবার কিনে আনা বা অর্ডার করে আনা বন্ধ করে দিয়েছেন, যাতে বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খাওয়া যায়, তেমনই আবার এমন মানুষও আছেন, যারা ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং গৃহস্থালির কাজকর্মের মধ্যে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন এবং ডায়েটের দিকে নজর দিতে পারেননি ।

আরও পড়ুন :নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা চোখের স্থায়ী ক্ষতি আটকাতে পারে

ঠিক এর বিপরীতভাবে, তাদের জীবনযাত্রা আরও বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে এবং তাদের খাদ্যাভ্যাস আরও বেশি অবিন্যস্ত হয়ে পড়েছে । উল্লেখ করতেই হবে সেই সময়ের কথা, যখন টালমাটাল পরিস্থিতির জেরে মানসিক কারণে খাদ্যের দিকেই সকলে আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে ।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানুষজন তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বর্তমানে প্রচণ্ড লড়াই চালাচ্ছে এবং সম্ভবত নানা ধরনের এমন উপায়ে চালাচ্ছে, যার সঙ্গে তাদের আগে পরিচয় ঘটেনি । টাটা স্কাই ফ্যামিলি হেলথের একজন বিশেষজ্ঞ মোনা জোহর, যিনি ফাংশনাল ইন্টিগ্রেটিভ নিউট্রিশন এবং মেকানিজম ওয়েলনেস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য মন দিয়ে খাওয়ার পদ্ধতিসমূহের তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন ।

দিনকে রুটিনের কাঠামোয় বেধে নিন

বাইরে বেরিয়ে সামাজিকতা রক্ষা, কাজে যাওয়া কিংবা প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো প্রভৃতি না করতে পারা আমাদের গত এক বছরে ইটিং ডিজঅর্ডারের দিকে ঠেলে দিয়েছে । আর অতি অবশ্যই, এতে সহায়ক হয়েছে কোনও রুটিনের মধ্যে না থাকা । তাই মানুষের দরকার সবসময় সময়সূচি মেনে এগোনো, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠা এবং নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যাওয়া । এই অভ্যাস তাদের একটি উদ্দেশ্য প্রদান করবে এবং ‘প্যানডেমিকের বিরক্তি’ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে । একটা রুটিনের কাঠামো তৈরি হয়ে গেলে, ডায়েট, শরীরচর্চা এবং ঘুম সব কিছু সময়মতই হয়ে যাবে ।

ডেস্কটপ ডায়েট

ডেস্কটপ ডায়েট

জীবন যখন দিনের বেশিরভাগ সময় ধরেই শুধু একটা টেবিল আর চেয়ারের চারপাশে কাটে, হোমস্কুলিং এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সিদ্ধান্ত এমনই হয় যে ডেস্কে বসেই খাবার খাওয়া হবে (স্ন্যাকস বিশেষ করে) । এবার স্ন্যাকস খাওয়া হলে তা এনার্জি তো বাড়াবেই এবং একটি একক পরিবেশে তা দেহে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট জমা করতেও সাহায্য করবে । তাই হয় স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত খাবার বা হাই প্রোটিন স্ন্যাকস বা স্বল্প ক্যালোরি আর উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত । আগে থেকে নিজেদের খাবার পরিকল্পনা করে রাখুন এবং যতটা সম্ভব তা টাটকা এবং অর্গ্যানিক রাখুন ।

মনোযোগ দিয়ে খান

মনোযোগ দিয়ে খান

মনোযোগী এবং স্বজ্ঞাত খাদ্যাভ্যাস করাকে ডায়েট বলে না । এগুলো হল এমন চিন্তা, যা রপ্ত করতে আপনাকে আপনার সহজাত প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস করতে হবে, নিজের শরীরের খিদের কথা শুনতে হবে এবং পেট কখন ভরে রয়েছে, সেই বার্তাও পেতে হবে । মনোযোগী হয়ে খাওয়াদাওয়া হল নিজের পুরনো খাদ্যাভ্যাসকে নতুন করে সাজানো, তা নিয়ে চিন্তা করা, পুরাতন খাওয়াদাওয়ার পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া এবং খাওয়াদাওয়ায় নিজের অনুভূতিকে কাজে লাগানো অর্থাৎ খাবারের বর্ণ, গন্ধ, শব্দ, বৈশিষ্ট্য এবং স্বাদ অনুধাবন করা । রোজ মনোযোগ দিয়ে খাওয়াদাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন এবং যখন তা করতে পারবেন না, তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করে দিন । এর জন্য কয়েক সপ্তাহ, মাসও সময় লাগতে পারে । তাই নিজেকে নিয়ে ধৈর্য্যশীল হন এবং আরও মজবুত শরীর-মনের সংযুক্তি গড়ে তোলা আর খাবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক আরও উন্নত করার প্রক্রিয়া উপভোগ করুন ।

আত্ম-উপলব্ধির যাত্রা শুরু করুন

আত্ম-উপলব্ধির যাত্রা শুরু করুন
  • খিদেকে মর্যাদা দিন : নিজের শরীরকে জৈবিকভাবে পর্যাপ্ত এনার্জি এবং কার্বোহাইড্রেট দিন । যখন অস্বাভাবিক খিদে পাবে, তখন মাঝারি মাপের খাওয়া বা ভেবেচিন্তে খাওয়ার সমস্ত চিন্তা অযৌক্তিক মনে হবে ।
  • ভুলভাল কারণে খাবেন না : নিজের অনুভূতিকে বুঝতে শিখুন এবং রাগ, উদ্বেগ কিংবা একাকীত্বের মতো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খাবারকে অজুহাত বানাবেন না ।

খাবারের সঙ্গে শান্তির সম্পর্ক গড়ুন : যে খাবার খেতে ইচ্ছে হয়, সেটাই কিনুন । নিজের ইচ্ছাকে বুঝতে শিখুন । তবে কখনও কখনও একবার একটু রসনাতৃপ্তির জন্য খাওয়া যেতেই পারে ।

  • পেট ভরে গেলে থেমে যান : শরীর কী সিগন্যাল দিচ্ছে, চিনতে শিখুন । যদি সে বলে আর খিদে নেই, খাবেন না । পেট যে ভরে গেছে, সেই সমস্ত চিহ্ন পড়তে শিখুন ।
  • অতিরিক্ত শরীরচর্চা করবেন না : নিজের শরীরবুঝে শরীরচর্চা করুন কিন্তু অতিরিক্ত কিছু করবেন না । ক্লান্ত হয়ে পড়লে, সহজ কোনও রুটিন বেছে নিন । নানা ধরনের ওয়ার্ক আউট করুন এবং শরীর বুঝে আরামদায়কটিকে বেছে নিন ।
  • শরীরচর্চা করুন এবং আনন্দও করুন : শুধুমাত্র ওজন হ্রাস করা কিংবা ক্যালোরি কম করার জন্য শরীরচর্চা করবেন না ।
  • পুষ্টিকর খাবার খান : স্বাস্থ্যকর, উচ্চমানের খাবার খেলে কতটা স্বাস্থ্যবান থাকেন, নিজেরাই খেয়াল করুন । তাই নিজের শারীরিক, মানসিক ও আবেগজনিত প্রতিক্রিয়ার খোঁজ রাখুন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details