হায়দরাবাদ: দীপাবলি বা আলোর উৎসবে সন্তানের সঙ্গে আপনি দিব্যি মেতে উঠলেন আতসবাজি পোড়ানোর আনন্দে ৷ বাজার থেকে কিনে আনা বিভিন্ন ধরনের রকেট, চড়কি, সেল, ফুলঝুড়ি, রং মশাল খুদের হাতে দিয়ে দেখছেন তার মিষ্টি মুখের হাসি ৷ আচমকায় বাড়ির ছোট্ট সদস্য কাশতে শুরু করল ৷ ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিল শ্বাসকষ্টের সমস্যা ৷ নাক দিয়ে জল পড়া, বুকে শাই-শাই আওয়াজ, সুস্থ বাচ্চা আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়ল ৷ আপনি দিশেহারা, বুঝতে পারছেন না কেন এমন হল ৷ ছুটলেন হাসপাতালে ৷
কাল্পনিক এই ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ চিকিৎসকরা বলছেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের এই সময়ে শ্বাসকষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার অন্যতম কারণ আতসবাজির ধোঁয়া ৷ আপনার অজান্তেই সন্তান আক্রান্ত হচ্ছে আতসবাজির বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৷ যার মারাত্মক ফলস্বরূপ অনেক শিশুকে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে ৷ আলোর উৎসবে মেতে উঠতে আতসবাজির ব্যবহার নতুন কিছু নয় ৷ কিন্তু এই আতসবাজি ফাটানোর সময় সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা এবার থেকে ভাবতে শুরু করুন ৷
বাজি থেকে বেরোনো ধোঁয়া যে ক্ষতিকর তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই ৷ এই ধোঁয়া যেমন ব্যাপকভাবে ফুসফুসের ক্ষতি করে তেমনই প্রভাব ফেলে হার্টের উপরেও ৷ বাজি থেকে নির্গত ধোঁয়া বাচ্চাদের ফুসফুসে ও হার্টে কী প্রভাব পরে তা জানতে ইটিভি ভারতের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল পালমোনোলজিস্ট রঞ্জন কুমার দাস ও কার্ডিয়োলজিস্ট রাণা সরবজিৎ সিংয়ের সঙ্গে ৷ দুই চিকিৎসকই একবাক্যে স্বীকার করেছেন আলোর উৎসবে আতসবাজির ব্যবহার আনন্দের সঙ্গে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যে ফেলে কু-প্রভাব ৷
ফুসফুস বিশেষজ্ঞ রঞ্জন কুমার দাস বলেন, "বাজি প্রধানত দু'ধরনের হয় ৷ একটা শব্দবাজি, যেমন- চকলেট বোমা, দোদোমা, কালি পটকা ৷ অপরটি হল যে বাজি আলো বেশি দেয় ৷ এই তালিকায় যেমন রয়েছে তুবড়ি, চড়কি ৷ এর মধ্যে ধোঁয়ার পরিমাণ বেশি হয় যে আতসবাজিগুলি আলো উৎপন্ন করে ৷ আবার ধরুন সাপবাজি বলে এক ধরনের বাজি হয়, যেগুলো খুব কাছ থেকে জ্বালাতে হয় ৷ এই বাজিতে অনেক ধোঁয়া হয় ৷ খুব কাছ থেকে যেহেতু এই বাজি পোড়ানো হয়, তাই ধোঁয়া ভীষণ পরিমাণে ফুসফুসে প্রবেশ করে ৷ ছোটোরা ভালো-মন্দ বোঝে না ৷ ফলে এই ধরনের বাজি পোড়ানোর সময় অতিরিক্ত ধোঁয়া নাক, মুখ ও শ্বাসনালী দিয়ে প্রবেশ করে শরীরে ৷"
অন্যদিকে, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রাণা সরবজিৎ সিং বলেন, "আমরা যে অক্সিজেন নিচ্ছি বায়ুদূষণের কারণে তাতেও বিষাক্ত জিনিস প্রবেশ করছে শরীরে ৷ কলকারখানা থেকে রাস্তার ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি কারণে বায়ুতে দূষিত পদার্থ মিশে থাকেই ৷ তাতে গোদের উপর বিষফোঁড়ার কাজ করে দিওয়ালির সময় আতসবাজির ধোঁয়া ৷ আমাদের শরীরে হার্ট ও লাংস ওতপ্রোতভাবে জড়িত ৷ একটা অর্গ্যানে কোনও সমস্যা হলে অপরটিতে প্রভাব পড়বেই ৷ আতসবাজির ধোঁয়াও বাচ্চাদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে ৷ এমনিতেই এখনকার বাচ্চার শহুরে আবহাওয়ায় বেড়ে উঠছে ৷ ফলে বায়ু দূষণের শিকার বাচ্চারা হয় প্রথম থেকেই ৷ ফলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়ে গিয়েছে তাদের ৷ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিচ্ছে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে ৷"
আতসবাজির বিষাক্ত গ্যাস কী কী সমস্যা তৈরি করতে পারে? চিকিৎসক রঞ্জন কুমার বলেন, "সাধারণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিষাক্ত ধোঁয়া অতিরিক্ত শরীরে প্রবেশ করলে নাক, মুখ ও শ্বাসনালীতে জ্বালা ভাব অনুভব হতে পারে ৷ কাশি হতে পারে ও নাক দিয়ে জল পড়া শুরু হতে পারে ৷ বুকের মধ্যে শাই-শাই আওয়াজ হতে পারে ৷ শ্বাসকষ্ট হতে পারে ৷ কিন্তু যে সকল বাচ্চা বা ছোট ছেলে-মেয়েরা অ্যাস্থমাতে ইতিমধ্যেই ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে এই বিষাক্ত ধোঁয়া আরও মারাত্মক ৷ এমনকী, অ্যাস্থমা অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে ৷ হাঁপানির সমস্যা ভীষণভাবে বেড়ে যায় ৷ অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হতে পারে বাচ্চাকে ৷ এছাড়া বাজি থেকে পুড়ে যাওয়ার একটা ভয় তো থাকেই ৷"