রায়গঞ্জ, 27 মার্চ : দেশজুড়ে জারি রয়েছে লকডাউন ৷ ব্যাহত পরিবহন ব্যবস্থা ৷ যার জেরে রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা মেডিকেল কলেজে আসতে সমস্যায় পড়ছেন । এর ফলে যাতে কোনওভাবেই চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে এলেন হাসপাতালের অস্থায়ীকর্মী ৷ রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ীকর্মী প্রশান্ত মল্লিক । নিজের বেতনের ছয় মাসের টাকা দিয়ে চারটি টোটোর ব্যবস্থা করলেন তিনি । এই টোটোর মাধ্যমে হাসপাতালে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সুবিধা পাবেন । নির্দিষ্ট ফোন নাম্বারে ফোন করলেই টোটো পৌঁছে যাবে সেই ডাক্তার,নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ির ঠিকানায় ৷ বাড়ি থেকেই পৌঁছে দেওয়া হবে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ।
দেশজুড়ে থাবা বসিয়েছে কোরোনা ভাইরাসের আতঙ্ক । ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংক্রমিত রোগীদের খবর শিরোনামে উঠে আসছে । সংক্রমণ যাতে আর না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে মোদি সরকার "জনতা কারফিউ"-এর ডাক দিয়েছিলেন । তারপরই বুধবার থেকে দেশে জারি করা হয়েছে লকডাউন । যার জেরে গণপরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে বিপর্যস্থ । আতঙ্কের মধ্যেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবারের কথা ভুলে লাগাতার চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে চলেছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা । দিনরাত এক করে কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লড়াই করে চলেছেন তাঁরা ।
কিন্তু লকডাউন চলার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের । হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজে আসতে সরকারি গাড়ির উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাঁদের । তবে একসঙ্গে এত কর্মীকে সবসময় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না সেই গাড়িগুলির পক্ষে । একই অবস্থা রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । এবারে এই সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে এলেন রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ীকর্মী প্রশান্ত মল্লিক । রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃণমূল কংগ্রেস অস্থায়ী কর্মী সংগঠনের সভাপতি তিনি ৷
নিজের ছয় মাসে বেতন থেকে চারটি টোটোর ব্যবস্থা করেছেন । টোটোগুলিতে লাগানো হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের অনুমতি পত্র । ওই টোটোগুলির চালকের নাম ও নম্বর দেওয়া রয়েছে প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসক এবং নার্সকে । ওই নম্বরে ফোন করলেই দ্রুত টোটো পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ি । তাঁদের বিনামূল্যে পরিষেবা দেবেন টোটো চালকরা । প্রতিদিন 400 টাকা করে ওই টোটো চালকদের পারিশ্রমিক দেবেন প্রশান্তবাবু । এই পরিষেবা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে বলেই মনে করছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মীবৃন্দ ।
এবিষয়ে প্রশান্ত বাবু বলেন, "দিনরাত এক করে স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের জন্য কাজ করে চলেছেন । কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁদের মেডিকেল কলেজে আসতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । তাঁদের এই সমস্যা লাঘব করার জন্যই আমি চারটি টোটোর বন্দোবস্ত করেছি । বিনামূল্যে পরিষেবা দেবে টোটোগুলি । যতদিন লকডাউন চলবে আমি এই ব্যবস্থা চালু রাখব ।" এবিষয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের নার্স অপর্না দাস বলেন, "টোটো পরিবহন ব্যবস্থা চালু করায় আমরা খুশি । এর মাধ্যমে আমরা সুবিধা পাব ।"