বারাসত, 28 জুন : কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ । এবার উত্তর 24 পরগনার বারাসত । অভিযোগ, সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বারাসত পৌরসভার 33 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সর্দার টাকা খেয়েছেন । কাটমানি ফেরতের দাবিতে গতকাল সকালে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী । যদিও এর পিছনে BJP-র হাত রয়েছে বলে অভিযোগ মিলনবাবুর ।
দিন কয়েক আগেই দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন, কেউ কাটমানি নিয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে । মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশর পরই জেলায় জেলায় কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ । যার জেরে কোথাও চাপের মুখে কাটমানির টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন তৃণমূল নেতারা । কোথাও কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে তৃণমূল নেতা থেকে শুরু করে সরকারি আধিকারিককে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
মিলনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম টাকা তুলেছেন । কারও থেকে 5,000 টাকা তো কারও থেকে 25,000 টাকা । সব মিলিয়ে অঙ্কটা প্রায় 24 লাখের কাছাকাছি । কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকেই আছেন যাঁরা টাকা দিয়েও সরকারি বাড়ি পাননি । আর তাই গতকাল টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা ।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, "সরকারি আবাস যোজনার বাড়ির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ঘোরাচ্ছেন কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা অমিত হালদার । আমি তাঁর কাছে গিয়ে বাড়ি পাব কি না জানতে চাইলে উনি আমাকে হুমকি দেন । আমি 33 নম্বর ওয়ার্ডের 182 পার্টের ভোটার । বাড়ি পাওয়ার লিস্টে নাম থাকা সত্ত্বেও এখনও আমি বাড়ি পাইনি । আমার ঘর ভেঙে পড়ছে ।"
যদিও, কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন মিলনবাবু । বলেন, "ভিত্তিহীন কথা বলছে । BJP কিছু লোককে সাজিয়ে এনে এসব করাচ্ছে । যদি কেউ টাকা দিয়ে থাকে,তা ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য পৌরসভায় দিয়েছে । সেই টাকা পৌরসভায় জমা রয়েছে । তার রিসিটও আছে ।" তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা অবশ্যই মেনে চলা উচিত । কেউ কাটমানি নিয়ে থাকলে তার তা ফেরত দেওয়া উচিত । " তিনি আরও বলেন, " আমি যে কাটমানির টাকা নিয়েছি তার কোনও প্রমাণ আছে । কেউ তো অভিযোগ করতেই পারে । প্রমাণ থাকলে আমি মেনে নেব । কিন্তু প্রমাণ ছাড়া আপনারা জোর করে চাপালে তো হবে না । " কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা তো আপনার বাড়িতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে । কী বলবেন এবিষয়ে? উত্তরে মিলনবাবুর বক্তব্য, "গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ বিক্ষোভ দেখাতেই পারে । আমিও আমার মত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারি । আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাঁরা তো আইনের কাছেও যেতে পারে । দোষীসাব্যস্ত হলে আইন যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব । কিন্তু আমার দল তৃণমূল এসবকে প্রশ্রয় দেয় না । আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন আমার ওয়ার্ডে সবথেকে বেশি বাড়ি পেয়েছে । তাও বিনা পয়সায় । তাই, মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে ।"
এবিষয়ে বারাসত পৌরসভার পৌরপ্রধান সুনীল মুখার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কাটমানির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই । যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে থাকে সেটা তাঁর দায়িত্ব। তাঁকেই এবিষয়ে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে ।" ওয়ার্ড উন্নয়নের জন্য মিলনবাবুর টাকা নেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে সুনীলবাবু বলেন, "এবিষয়টা আমার জানা নেই । যদি ওয়ার্ড উন্নয়নের জন্য কেউ টাকা দিয়ে থাকে তাহলে রিসিট দেখাক কাউন্সিলর । তাহলেই সত্যি- মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যাবে ।"