পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

শ্রমিকদের সোয়াব টেস্টে "না" উত্তর 24 পরগনা জেলা প্রশাসনের , সমালোচনায় বিরোধীরা

ভোল বদল জেলা প্রশাসনের। ভিন রাজ্য থেকে ফেরা সকল পরিযায়ী শ্রমিকের সোয়াব টেস্ট নয়। সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিরোধীরা।মুখর প্রশাসনের সমালোচনায়।

বারাসত
জেলা প্রশাসন

By

Published : Jun 1, 2020, 10:28 AM IST

Updated : Jun 1, 2020, 10:43 AM IST

বারাসত,1 মে : ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতেই উত্তর ২৪ পরগনায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে চারশোর উপর। যার মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০ ছুঁইছুঁই । প্রতিদিনই যেখানে জেলার কোথাও না কোথাও কেউ সংক্রমিত হচ্ছেন,যার মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি ৷ এই অবস্থায় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভিন রাজ্য থেকে ফেরা সকল শ্রমিকের সোয়াব টেস্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন । আর জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সকলে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে যে এর পিছনেও গোপন কোনও রহস্য রয়েছে । বিরোধীদের একাংশের মত ,কোনও রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে সচেতনতার অভাবে উপসর্গহীন পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরে ঘুরে বেড়াবেন ৷ তাদের মধ্যে যদি কেউ কোরোনা সংক্রমিত হয় তাহলে তার থেকে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন ৷ এছাড়া বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেন যে সংক্রমণ বাড়লে তার দায়িত্ব প্রশাসন নেবেন কি? সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক মহলের একাংশও ।

কোরোনা আক্রান্তের নিরিখে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে আগেই হটস্পট অর্থাৎ রেড জো়ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকাতেও এই জেলা রেড জো়নেই রয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন একাধিক পদক্ষেপ নিলেও এই জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনাহীন পদক্ষেপকেই এর জন্য দায়ি করেছেন অনেকে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন প্রথম থেকে যদি জেলা প্রশাসন সক্রিয় হত তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি আজ দাঁড়াত না। আগামীকাল থেকে আনলক ওয়ান শুরু হতে চলেছে । আর এরই মধ্যে দলবেঁধে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকরা।জেলার দেগঙ্গা,আমডাঙা,হাবরা,অশোকনগর,বনগাঁ বারাসত ১ ও ২ নম্বর ব্লক মিলিয়ে কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। এখনও অনেকে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

অভিযোগ,ভিন রাজ্যে থেকে ফেরা শ্রমিকদের এখন শুধু বারাসত স্টেডিয়ামে স্ক্রিনিং করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । যদিও আগে বলা হয়েছিল ব্লকে ফিরে সেখানকার প্রশাসন শ্রমিকদের সোয়াব টেস্টের নমুনা পরীক্ষা করবে। কিন্তু এখন ভোল বদলে জেলা প্রশাসন ৷ সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসর্গ রয়েছে এমন পরিযায়ী শ্রমিকেরই শুধু সোয়াব টেস্ট করা হবে। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। বিরোধীরা তো এক কদম এগিয়ে মনে করছেন এর পিছনে তথ্য গোপনের অভিযোগও রয়েছে।

এই বিষয়টি নিয়ে জেলার বাম নেতা ও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন,"কোরোনা মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ৷ প্রথম থেকেই আমরা দেখেছি,কোরোনা টেস্ট নিয়ে এই সরকারের একটা অনীহা রয়েছে। কিট থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন অনুযায়ী টেস্ট হয়নি। এছাড়াও তিনি অভিযোগ তুলে বলেন , কোথাও যেন কোরোনা নিয়ে তথ্য গোপনেরও চেষ্টা চলেছে। প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্যই জেলায় বাড়ছে কোরোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে সকল পরিযায়ী শ্রমিকের যাতে টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়,তার দাবি জানাব আমরা"। সঞ্জীব বাবুর সুরে সুর মিলিয়ে জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন,"পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সবকিছুতেই সরকারের অনীহা দেখা গিয়েছে । টেস্ট না হলে তো কোরোনা আক্রান্তকে চিহ্নিত করাই যাবেনা। সবাই যেখানে অধিক টেস্টের কথা বলছে। সেখানে টেস্ট কিভাবে কম হয় এখানে,তা নিয়েই ব্যস্ত প্রশাসনের কর্তারা। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছি"।

যদিও,বিরোধীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চায়নি শাসকদল। জেলা তৃণমূল নেতা অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন,"বিরোধীরা কোরোনা নিয়েও রাজনীতি করতে ব্যস্ত। সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েও সরকার যথেষ্ট সহনশীল। তাই,বাম ও ডান সকলকেই বলব রাজনীতি না করে এই পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।তাতে মানুষ অন্তত উপকৃত হবেন"।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,"এখন উপসর্গ রয়েছে এমন পরিযায়ী শ্রমিকের সোয়াব টেস্ট করা হলেও পরবর্তীকালে পরিস্থিতি বুঝে সকলের টেস্ট করা হতেও পারে ৷ আমরা ভিন রাজ্য থেকে ফেরা সকল শ্রমিককেই ইতিমধ্যে ১৪ দিনের হোম কোয়ারানটিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। পরিযায়ী সকল শ্রমিকের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রয়েছে প্রশাসনের। এই নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শই দিচ্ছি আমরা"।

Last Updated : Jun 1, 2020, 10:43 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details