বারাসত, 5 জুন : ফুলের গেট, রঙিন কাগজে সাজানোটা একেবারে ঠিকঠাক হওয়া চাই । কোনও কিছুর যেন খামতি না থাকে । ইদের আগে রাত জেগে মসজিদ সাজান তিনি । শুধু তাই নয়, মসজিদের ভালো-মন্দ সকল কাজেই রয়েছেন যিনি, তিনি মুসলিম নন, হিন্দু । এক বছর দু'বছর নয়, বছরের পর বছর ধরে চড়াই-উতরাইয়ের মাঝেও বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন প্রাচীন মসজিদ ।
ষোড়শ শতক । শের শাহ তখন দিল্লির তখতে । বারাসতে গড়ে ওঠে আমানতি মসজিদ । কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে ধর্মপালন করে আসছিলেন মুসলিমরা । তারপরের ইতিহাস পাওয়া না গেলেও, অবস্থার মোড় ঘোরে গত শতকে । মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে ভারত ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর হয় । দু'দেশের চুক্তির পর ওপারের হিন্দুরা এপারে চলে আসেন । তেমনই এপারের মুসলিমরা ওপারে চলে যান । বারাসতের আমানতি মসজিদ ও সেই সংলগ্ন জমি-জমাও হস্তান্তরিত হয়ে যায় । নতুন মালিক হয় বোস পরিবার । সেই সময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে দেশে । অনেকেই বলেছিল মসজিদ না রাখতে । কিন্তু, মন মানেনি পরিবারের কর্তা নিরোধকৃষ্ণ বোসের । বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন । মুছে যেতে দেননি ইতিহাস ।
ধর্মীয় রীতিনীতি আলাদা । সংস্কৃতিও এক নয় । তবুও মসজিদটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে বোস পরিবার । বর্তমানে মসজিদের দেখাশোনা করেন নিরোধকৃষ্ণ বোসের নাতি পার্থসারথীবাবু । নিজের ধর্মপালনের পাশাপাশি ভোলেননি মসজিদের দায়িত্বও । মুসলিম ভাইদের সঙ্গে তাঁর নিত্য নমাজ় পড়া চাই । আর ইদ এলে তো কথাই নেই । রাত থাকতে মসজিদ সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে নেন নিজের কাঁধে ।