বিধাননগর, 9 সেপ্টেম্বর : বাগুইআটি জোড়া খুনে (Baguiati Double Murder) মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন (Howrah Station) থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ প্রায় 18 দিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন ৷ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর সন্ধান পায়নি পুলিশ ৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে তাহলে কীভাবে ধরা পড়লেন সত্য়েন্দ্র ?
পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকশন (Mobile Phone Tower Location) ট্র্যাক করেই ধরা হয়েছে তাঁকে ৷ এদিন সকালে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সত্যেন্দ্রর ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখায় পুলিশকে ৷ সেই মতো তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে ধরা হয় ৷
কিন্তু এতদিন কেন টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাঁকে ধরা গেল না ?
পুলিশের ওই সূত্রের দাবি, গত 25 অগস্ট থেকে সত্যেন্দ্র একাধিক জেলায় ঘুরে বেড়াতেন ৷ ফোন অন করত মাত্র 5 থেকে 10 মিনিটের জন্য ৷ ওই সময়ের মধ্যেই অভিষেক নস্কর ও অতনু দে-র পরিজনদের হুমকি মেসেজ পাঠাত ৷ তার পর ফোন বন্ধ করে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যেত ৷ ফলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় গিয়ে আর সত্যেন্দ্রকে খুঁজে পাওয়া যেত না ৷
কিন্তু শুক্রবার সকালে মুম্বই (Mumbai) যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটার পরিকল্পনা ছিল তাঁর ৷ সেই মতো তিনি একটি বেসরকারি টিকিট কাউন্টারে গিয়েছিলেন ৷ তখন টাকার জন্য তিনি বিভিন্ন জনকে ফোন করেন ৷ সেই সময় তাঁর ফোন প্রায় আধঘণ্টা অন ছিল ৷ ফলে এদিন তাঁর টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করতে অনেক সুবিধা হয় পুলিশের ৷
হাওড়া স্টেশন থেকে ধরার পর সত্যেন্দ্রকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে ৷ সেখানে পৌঁছে যান সিআইডির (CID) আধিকারিকরাও ৷ যৌথভাবে জেরা করা হয় তাঁকে ৷ তার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া বারাসত আদালতে ৷ সেখানে আদালত সত্যেন্দ্রকে 14 দিনের সিআইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে ৷
এবার ধৃতকে জেরা করে এই খুনের কিনারা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা ৷ তাঁরা জানতে চান, কীভাবে খুন করা হয়েছে ওই দুই ছাত্রকে ? কেন তাদের খুন করা হল ? খুনের পরও কেন টাকার দাবিতে এসএমএস করছিলেন তিনি ? শুধু বিভ্রান্ত করতেই কি এই কাজ করছিলেন সত্য়েন্দ্র ?
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বাগুইআটির দুই ছাত্রকে খুনের বিষয়টি সামনে আসে ৷ ওইদিন নিহত দুই ছাত্রের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ৷ পুলিশের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ তোলা হয় ৷ পরিবারের দাবি, অগস্টের মাঝামাঝি নিখোঁজ হয়ে যায় অতনু দে ও অভিষেক নস্কর নামে ওই দুই ছাত্র ৷ বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ ৷
প্রায় 15 দিন পর জানা যায় যে বসিরহাট হাসপাতালের মর্গে রয়েছে অতনু ও অভিষেকের দেহ ৷ দশদিন আগেই দেহ উদ্ধার হয়েছিল ৷ কিন্তু পুলিশি সমন্বয়তার অভাবে পরিবারের কাছে খবর আসেনি ৷ তখনই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায় ৷
এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই কড়া পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার ৷ সাসপেন্ড করা হয় বাগুইআটি থানার আইসিকে ৷ তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডির হাতে ৷ প্রাথমিক তদন্তে সত্যেন্দ্র চৌধুরীর নাম উঠে আসে ৷ অভিযোগ, অপহরণ করে খুন করা হয় ওই ছাত্রকে ৷ যে গাড়িতে খুনের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ, সেটিও উদ্ধার হয়েছে ৷
আরও পড়ুন :বাগুইআটিতে জোড়া খুনের দু'সপ্তাহ পর হাওড়ায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত