বসিরহাট, 13 মে: 'হেরিটেজ'-তকমার এক বছর পরও অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধান্যকুড়িয়া গাইন গার্ডেন। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে সেটি ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। গার্ডেনের চারপাশ ভরেছে ঘাস এবং আগাছায়। সীমানা পাঁচিলও যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। অথচ তারপরও রক্ষণাবেক্ষণের কোনও উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। কার্যত অযত্নে পড়ে থেকে থেকে বিশাল এই স্থাপত্য আজ নষ্ট হওয়ার মুখে। প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুত এই ঐতিহাসিক ভবন সংস্কার করা হোক, চাইছেন তাঁরা।
প্রায় দেড়শো বছর আগে বসিরহাট-বেড়াচাঁপার টাকি রোডের ধারে 'গাইন' দুর্গের আদলে বিশাল এই স্থাপত্য গড়ে তোলেন ধান্যকুড়িয়ার পাট ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ গাইন। পরবর্তীকালে যা গাইন গার্ডেন নামে পরিচিতি পায়। 33 বিঘা জমির ওপর সুদৃশ্য অট্টালিকা ছাড়াও আমোদ প্রমোদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি বাগানবাড়িও। সেখানে জমিদার এবং তাঁদের ব্যবসায়িক সহযোগী ইংরেজদের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। সেসময় টাকি রোড বরাবর মার্টিন রেল চলত। যার স্টেশন ছিল ধান্যকুড়িয়ায়। ওই রেলে করে ইংরেজরা আসতেন গাইন গার্ডেনে। এখন সেসব অতীত। তবে, সেই সমস্ত ইতিহাসের চিহ্ন এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গাইন গার্ডেনের আনাচে কানাচে।
যেগুলোর অধিকাংশই আজ ধ্বংস হতে বসেছে কেবলমাত্র সংস্কারের অভাবে। আগে গার্ডেনের ভিতর অট্টালিকার পুকুর ঘাটে দু'টি বড় মার্বেলের সিংহ ছিল। নব্বইয়ের দশকে গাইন পরিবারের কয়েকজন সেই সিংহ দু'টি বিক্রি করে দেন। তবে বাগানবাড়ির গেটে দু'জন ইংরেজ একটি সিংহকে বধ করছে-এরকম একটি ভাস্কর্য এখনও রয়েছে। তিরিশের দশকে এখানে 'কপালকুণ্ডলা' সিনেমার শ্যুটিংও হয়েছিল। ফলে, ইতিহাসের পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে এর জৌলুস কমতে শুরু করে। তবে ইন্দো-ইউরোপীয় মিশ্র আঙ্গিকের সুদৃশ্য এই অট্টালিকা এখনও অবাক করে এলাকার লোকজনকে । 2022 সালে হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি মেলে এই জায়গা। চলতি বছরের 18 এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের ব্রশিওরে ধান্যকুড়িয়া গাইন গার্ডেনের ছবি দিয়ে এই স্থাপত্যকে সম্মান জানানো হয়।