ঠাকুরনগর, ৭ মার্চ : মতুয়া মহাসংঘের নতুন প্রধান হিসাবে মমতাবালা ঠাকুরের নাম ঘোষণা করল সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘ। তবে মহাসংঘের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর। এর আগে বড়মা বীণাপাণিদেবীর শেষকৃত্য কখন, কীভাবে হবে তা নিয়ে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। বড়মার মুখাগ্নির পর ফের ক্ষমতার দখল নিয়ে পারিবারিক কলহ প্রকাশ্যে এল। জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুরের নাম প্রধান উপদেষ্টা পদে ঘোষণার পর আজ ফের শান্তনু ঠাকুর সুর চড়ালেন।
৫ মার্চ বড়মার মৃত্যুর পর থেকেই ঠাকুর পরিবারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে। বড়মার শেষকৃত্যের সময়সূচি এবং নিয়মবিধি নিয়ে পরিবারের মধ্যে মতান্তর শুরু হয়েছিল। বড়মার ছোটো ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর অভিযোগ করেছিলেন, "বাড়াবাড়ি করছে প্রশাসন।" একই সুরে নাতি শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, "মতুয়া আদর্শমতে ঠাকুমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হোক। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসছেন মাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরা এসে যদি বড়মাকে দেখতে না পান, তাহলে আগুন জ্বলে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো করলে হবে না। বিকেল ৪টে নাগাদ শেষকৃত্য করা হবে। এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের নেই। প্রশাসনের কাজ হল শৃঙ্খলা বজায় রাখা।" তিনি এমনও অভিযোগ করেছিলেন যে "রাজনৈতিক স্বার্থে বড়মাকে সুপরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।"
গতরাতে ঠাকুরবাড়িতে দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনার পর ঠিক হয় আজ বেলা ১১টা নাগাদ শোকযাত্রা বের হবে। তারপর ১১টা ৪৫ মিনিটে গান স্যালুট দেওয়ার পরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। কিন্তু আজ সকালে ফের শান্তনু ঠাকুর বলেন, "গতকালের কথামতো আজ বিকেল ৪টেয় বড়মার শেষকৃত্য হবে। মুখাগ্নি করবে বাবা (মঞ্জুলকৃষ্ণ)।" শেষকৃত্যের আগেও প্রশাসনের সঙ্গে বচসা বাধে শান্তনু ঠাকুরের। মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রা বের হলেও তা ফিরিয়ে আনা হয় ঠাকুরবাড়িতে। প্রায় ১০ মিনিট আলোচনায় রফাসূত্র বের হলে ফের শুরু হয় শোকযাত্রা।
বড়মার শেষকৃত্যের পর পরই মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি নন্দদুলাল মহন্ত সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন মমতাবালা ঠাকুর সংঘের আগামী উপদেষ্টা। যদিও অস্থায়ীভাবে মমতাবালা ঠাকুরের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও এই ঘোষণার পর পরই আবার পরিবারে দুইপক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি পদে রয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর। তাই মমতাবালাই আপাতত সংঘাধিপতি ও প্রধান উপদেষ্টা দুটি পদের দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘোষণার পর শান্তনু ঠাকুর বলেন, "বড়মার চিতার আগুন নিভতে পারল না ,আর এখনই উপদেষ্টা ঘোষণা করা হল। ঠাকুরবাড়ির বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে। সংঘাধিপতি, প্রধান উপদেষ্টা, সভাপতি কে হবেন, তা নির্বাচন করার অধিকার আছে একমাত্র ভক্তদের। মতুয়া ধর্মের নীতি আদর্শ না জেনে শুধু রাজনীতি করে উপদেষ্টা হওয়া যাবে না। উপদেষ্টা হতে গেলে থাকতে হবে যোগ্যতা। ভক্তরা এই সিদ্ধান্ত মানবে না।"