দত্তপুকুর, 3 সেপ্টেম্বর : ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় বৃহস্পতিবার দত্তপুকুরে তদন্তে এলেন সিবিআইয়ের বিশেষ টিম ৷ দত্তপুকুরের উলা গ্রামের পূর্বপাড়ায় তদন্তে এসে নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ঘুরে দেখেন দেহ উদ্ধার হওয়ার এলাকা ৷ সিবিআইয়ের এই তদন্তে খুশি হলেও তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার চৈতন্য মণ্ডলকে ঘুরতে দেখে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ৷
তাঁদের দাবি, আইএসএফ কর্মী হাসানুজ্জামান (37) খুন হওয়ার পর থেকে ওই অফিসার কোনও সহযোগিতা করেননি নিহতের পরিবারের সঙ্গে ৷ বারবার থানায় গিয়ে বলা সত্ত্বেও উনি অপরাধীদের হয়ে সাফাই দিয়েছেন ৷ এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করে উনি অপরাধীদের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করছেন ৷
এই বিষয়ে সিবিআই আধিকারিকদের সামনে সরব হন মৃত আইএসএফ কর্মীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ শেষে সিবিআইয়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । খুনের মামলায় দোষীদের পাশাপাশি তদন্তকারী অফিসার চৈতন্য মণ্ডলেরও শাস্তির দাবি জানান তাঁরা সিবিআইয়ের কাছে ৷
আরও পড়ুন :CBI Charge Sheet: ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় প্রথম চার্জশিট সিবিআইয়ের
প্রসঙ্গত, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরের দিন 3 মে এই গ্রামেই খুন হন আইএসএফ কর্মী হাসানুজ্জামান । পরিবারের অভিযোগ, বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চাষের জমিতে ওই আইএসএফ কর্মীকে বোমা মেরে কুপিয়ে খুন করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা । কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই খুনের মামলারই তদন্ত করতে এদিন উলা গ্রামে যান সিবিআই আধিকারিকরা ।
জানা গিয়েছে, এদিন প্রথমে নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয় ৷ এছাড়া খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই মহিলার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন সিবিআইয়ের বিশেষ টিম । পরে, ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে খতিয়ে দেখে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নেওয়া হয় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে । কীভাবে হাসানুজ্জামানকে খুন করা হয়েছিল, কোথা থেকে আততায়ীরা এসেছিল সেই বিষয়টিও ঘটনাস্থলে নিহতের স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চান নেন সিবিআই আধিকারিকরা ।
তখনই মামলার তদন্তকারী অফিসার কদম্বগাছি ফাঁড়ির ওসি চৈতন্য মণ্ডলকে দেখে ক্ষেপে যান নিহতের পরিবারের লোকজন । তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের বাসিন্দারা । কীভাবে মামলা প্রভাবিত করা হয়েছে, মামলা ধামাচাপা নিতে যেভাবে তিনি সক্রিয় ছিলেন সেই অভিযোগ এদিন তুলে ধরা হয় সিবিআইয়ের আধিকারিকদের সামনে । এমনকি আইএসএফ কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও করা হয় ওই অফিসারের বিরুদ্ধে । এদিন প্রায় দু'ঘণ্টা উলা গ্রামের পূর্বপাড়ায় ছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল ।
আরও পড়ুন :Post Poll Violence : ভোট পরবর্তী হিংসায় দু'জনকে গ্রেফতার করল সিবিআই
সিবিআই তদন্তে আস্থা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী মারিফা বিবি । তিনি বলেন, "সিবিআই তদন্ত শুরু করায় আশা করছি এবার সুবিচার পাব । দোষীদের ফাঁসি চাই ।" তবে তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকায় তাঁরা সকলেই যে অসন্তুষ্ট তা স্পষ্ট ভাষায় এদিন জানিয়ে দেন তিনি ।
একই সুর শোনা গিয়েছে নিহতের বৌদি আসমাতারা বিবির গলাতেও । তিনি বলেন,"তদন্তকারী অফিসার প্রথম থেকেই খুনের মামলা ধামাচাপা দিতে সক্রিয় ছিলেন । খুনের ঘটনায় মোট দশজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও এখনও মাত্র চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । পুলিশের সহায়তায় ওই সমস্ত আসামীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামে । হুমকি দিচ্ছে পরিবারের লোকজনকে । আমরা চাই, ওই সমস্ত অভিযুক্তদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হোক । দোষীদের পাশাপাশি সাজা হোক তদন্তকারী অফিসারেরও ।"
অন্যদিকে,মামলার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ দেখে আগামীতে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রে খবর ।
আরও পড়ুন :Post Poll Violence : কাঁকুড়গাছির মৃত বিজেপি সমর্থকের শেষ ফেসবুক লাইভই সিবিআইয়ের হাতিয়ার