দত্তপুকুর, 3 জুলাই : ভোটের ফলাফল প্রকাশের দু'মাস পরও হিংসা, অশান্তি, বোমা উদ্ধারের ঘটনা থামার কোনও লক্ষ্মণ নেই উত্তর 24 পরগনা জেলায় । উল্টে, এই ধরনের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে । তারই মধ্যে শনিবার সকালে বোমা মিলল উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরে । তবে, সেই বোমা কোনও নির্জন জায়গা কিংবা রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস থেকে মেলেনি । মিলেছে কারওর বাড়ির একেবারে দোরগোড়ায়, তো কারও দোকানের সামনে । বাদ যায়নি ক্লাব চত্বরও । সেখান থেকেও উদ্ধার হয়েছে বোমা । যা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বেড়েছে এদিন । ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে । চলছে দোষারোপ,পাল্টা দোষারোপের পালাও । পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাজা বোমাগুলো উদ্ধার করেছে । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে । রীতিমতো হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে । হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে প্রতিটি থানায় যাবতীয় অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে । আহতদের চিকিৎসা থেকে খাদ্যসামগ্রী সবকিছুরই দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে । এমনকি, ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থাও করতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে । হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করার পরও বেশ কিছু জায়গায় হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে । যা নিয়ে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির । যদিও সেই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব । উল্টে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে শাসকদল ।এসবের মধ্যেই এবার দত্তপুকুরে বোমা উদ্বারের ঘটনায় লাগল রাজনৈতিক রং । খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্ট ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই সরগরম ছিল দত্তপুকুরের বাপপুর এলাকা । স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগ ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় । পাল্টা ওই যুবককে শাসানি, দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে । যা নিয়ে রাজনৈতিক পারদ চড়ছিল তখন থেকেই । এদিন বোমা উদ্ধারে সেই পারদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও ।
আরও পড়ুন,বারুইপুরে বিজেপি নেতার বাড়ি থেকে দু‘ব্যাগ বোমা উদ্ধার
এই বিষয়ে পুষ্প কর্মকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "সপ্তাহখানেক আগে ভুলবশত আমার ছেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট করেছিল । পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়ে নেয় সে । তা সত্বেও এদিন বাড়ির দোরগোড়ায় একটি ব্যাগের মধ্যে দুটি তাজা বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায় । রাতের দিকে বোমা পড়ার শব্দও শোনা যায় । আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ । কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই । তারপরও কেন বোমা রাখা হল তা বুঝতে পারছি না । ঘটনার তদন্ত করা উচিত পুলিশের ৷"
স্থানীয় যে দোকানের সামনে বোমার ব্যাগ পড়েছিল সেই দোকানের মালিক শচীন বাগ বলেন, "ভোটের সময় দোকানের সামনে সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফকে সভা করার অনুমতি দিয়েছিলাম । সেই আক্রোশে এক সপ্তাহ আগে আমাকে হুমকি দিয়ে যায় শাসকদলের লোকজন । বলে, এলাকায় বোমা ফেলা হবে । তারপরই এদিন দোকানের সামনে থেকে ব্যাগের মধ্যে তিনটি বোমা উদ্ধার হয় । আরও চারটি বোমা মিলেছে স্থানীয় একটি ক্লাব চত্বর থেকে । পাশ্ববর্তী এক বাসিন্দার বাড়ির দোরগোড়া থেকেও দুটি বোমা উদ্ধার হয়েছে ব্যাগের ভিতর থেকে । ঘটনার পিছনে শাসকদল হুমকির ঘটনা রয়েছে কি না, তা জানা নেই ৷"
এদিকে,ঘটনার পরই রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও আইএসএফ । পূর্ব খিলকাপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান মধুমিতা গুপ্ত বলেন,"সপ্তাহখানেক আগে যে ছেলেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় খাদ্যমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর পোস্ট করেছিল,সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম আমরা । তারপরই এই উদ্ধারের ঘটনা । তাই ঘটনার আইএসএফের যোগ থাকলেও থাকতে পারে ৷" এই ঘটনায় শাসকদলের যোগ থাকার অভিযোগ খণ্ডন করে পাল্টা ঘটনায় প্রকৃত তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি ।