হাবড়া,24 নভেম্বর : লোকসভায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এলাকায় থাবা বসিয়েছে BJP ৷ লোকসভার ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, বারাসত লোকসভার অন্তর্গত হাবড়া বিধানসভায় প্রায় 20 হাজার ভোটে লিড পায় BJP ৷ তাই সভা সমিতিতে BJP-কে যতই ফুৎকারে উড়িয়ে দিন না কেন, নিজের বিধানসভায় কোনও রিস্ক নিতে রাজি নন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ৷ এমনিতেই আমফান পরবর্তী সময়ে ত্রাণের সাহায্য না পেয়ে নানা জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে ৷ সেই বিক্ষোভের আঁচ তাঁর দিকেও ধেয়ে এসেছে ৷ শোনা কথা, এজন্য দল আর দলনেত্রীর কাছেও তাঁর তিরস্কার জুটেছে ৷ তাই, নিজের গড় রক্ষা করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন এই তৃণমূল নেতা ৷ যদিও বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট এখনও জারি হয়নি। প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেনি কোনও দল। তবু উত্তর 24 পরগনার হাবড়ায় শুরু হয়ে গেল দেওয়াল লিখন। হাবড়ার বিভিন্ন জায়গায় BJP-র পক্ষ থেকে বিধানসভা ভোটের দেওয়াল লিখন চলছে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাসতালুকে দেওয়াল লিখন ঘিরে BJP-তৃণমূল রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে বামেদের শক্তঘাঁটি ছিল এই হাবড়া। সেই মিথ ভেঙে দিয়ে 2011 সাল থেকে পরপর দু'বার জিতে হাবড়া থেকে খাদ্যমন্ত্রী হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু তৃণমূলের সেই গর্বের গড়ে থাবা বসিয়েছে BJP । হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রটি বারাসত লোকসভার অন্তর্গত। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার প্রায় এক লাখ দশ হাজার ভোটে জয়লাভ করেন। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রীর হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রে 19 হাজার 700 ভোটে BJP-ই লিড ছিল। তাই, হাবড়া কেন্দ্র এখন তৃণমূলের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গ বাঁচাতে লোকসভা ভোটের পর থেকে খাদ্যমন্ত্রী হাবড়ায় বিস্তর ঘাম ঝড়াচ্ছেন। স্থানীয়দের মতে, পারিষদ ঘেরা খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাবড়ার সাধারণ মানুষ এক সময় দেখা করার সুযোগ পেতেন না। সেই খাদ্যমন্ত্রী এখন ফি সপ্তাহে শনি ও রবিবার হাবড়া পৌরসভায় "জনতার দরবার" বসাচ্ছেন। তা ছাড়া ছোট-বড় যে কোনও কর্মসূচিতেই তিনি সামিল হচ্ছেন। পাড়ার মামুলি শনিপুজোতেও খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা বিদ্রুপ শুরু করেছে। BJP ও CPI(M) নেতারা এখন তাঁকে "হাবড়ার কাউন্সিলর" বলেও বিদ্রুপ করেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, নিবির জনসংযোগ বাড়িয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক লোকসভা ভোটে হাবড়ার হারানো রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করে ফেলেছেন। BJP অবশ্য হাবড়া কেন্দ্রকে এবার বিধানসভা নির্বাচনে পাখির চোখ করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে কোনও মূল্যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে হারাবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রী BJP-র ভয়ে হাবড়া কেন্দ্র এবার দাঁড়াতে চাইছেন না। দলের রাজ্য সভাপতির নির্দেশ পাওয়ার পর গেরুয়া শিবির মাঠে নেমে পড়েছে। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট জারি হওয়ার আগেই হাবড়ায় BJP দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছে। ওই দেওয়ালগুলোয় অবশ্য প্রার্থীর নাম লেখা হচ্ছে না। সেই অংশটি ফাঁকা রেখে কেবল 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে BJP প্রার্থীকে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আরও লেখা হচ্ছে, 'ফুটবে এবার পদ্মফুল। বাংলা ছাড়ো তৃণমূল।' লেখা হচ্ছে, 'দিদির পায়ে হাওয়াই চটি, দিদি ভাইপো-ভাইরা কোটিপতি।' হাবড়ার 9 নম্বর ওয়ার্ডের একটি দেওয়াল লিখনে দেখা গেল BJP-র ওয়ার্ড সভাপতি সুদীপ্ত কুন্ডু। তিনি বললেন, 'আমরা জানি এবার আমরা জিতব। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আমরা হাবড়া থেকে 50 হাজার ভোটে হারাব। কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে আমরা তাই এবার অনেক আগে থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছি।' পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে BJP নেত্রী কেকা ঘোষমুনশিও প্রায় একই দাবি করেছেন। BJP-র দেওয়াল দখলের বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন হাবড়া পৌরসভার প্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা নিলীমেশ দাস। তিনি বলেন, 'আমরা সারা বছর কাজ করি। আমরা মানুষের হৃদয়ে আছি। ভোট ঘোষণার আগেই যাঁরা এখন দেওয়াল লিখছেন, তাঁরা প্রথমবার রাজনীতি করছেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গতবার 47 হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবার ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দেখবেন, তিনি দ্বিগুণ ভোটে জিতেছেন। BJP আগে দেওয়াল লিখলেও পরে দেখবেন, দেওয়ালে তৃণমূলই জ্বলজ্বল করছে। BJP ফিকে হয়ে যাবে।' ভোটের বাকি এখনও কয়েকমাস। কিন্তু দেওয়াল দখলের তরজায় খাদ্যমন্ত্রীর খাসতালুকে ভোটের টেম্পো উঠেই গিয়েছে।