গাইঘাটা, 19 নভেম্বর : চাকরি করতেন বেসরকারি সংস্থায় । লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েন । চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছিলেন । আলাপ হল কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিকের সঙ্গে । তাঁরই দেখানো পথে ডিম ফোটানো যন্ত্র তৈরি করে স্বনির্ভরতার নতুন দিশা দেখাচ্ছেন গাইঘাটার যুবক মণীশ পাণ্ডে ।
উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থানার রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা বছর ছত্তিশের মণীশ । সিভিল ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ । চাকরি করতেন একটি নামী বেসরকারি সংস্থায় । কোরোনা পরিস্থিতিতে হারান চাকরি । স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে আকূল পাথারে পড়ে যান । আর্থিক অনটনে সংসারে অশান্তি শুরু হয় । কী করবেন, কোথায় যাবেন ভেবে দিশাহারা । অবশেষে এক বন্ধুর পরামর্শে সোজা চলে যান গাইঘাটা কৃষি দপ্তরের অফিসে । সেখানে দেখা করেন দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনিকাল ম্যানেজার সুবীর দাসের সঙ্গে । তাঁর সামনে নিজের অসহায়তার কথা বলে মণীশ কেঁদে ফেলেন । সুবীরবাবু তাঁকে ভেঙে না পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন । কৃষি দপ্তরে হাঁস-মুরগির ডিম ফোটানোর পেল্লাই যন্ত্র দেখিয়ে তার প্রযুক্তিগত দিকগুলো তিনি মণীশকে বোঝান । হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন চাকরি হারানো যুবক ।
তারপর ঘরোয়া পদ্ধতিতে সেই ইনকিউবেটর বা ডিম ফোটানোর যন্ত্র ঘরে বসে কীভাবে বানানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন । থার্মোকলের বাক্স কেনেন । বাক্সের ভিতরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য কম খরচে কিছু বৈদ্যুতিন যন্ত্রও কিনে আনেন । প্রথমে 100টি ডিম তার মধ্যে রেখে পরীক্ষা করে দেখেন । নির্দিষ্ট দিনের পরে দেখা যায়, 90টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বেরোচ্ছে । তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে । গত তিন মাসে বেশ কিছু ইনকিউবেটর যন্ত্র তিনি তৈরি করেন । দিনে দিনে ওই যন্ত্রের বরাতও আসছে তাঁর কাছে । সঙ্গে আট থেকে দশ টাকায় কেনা ডিম ফুটিয়ে হাঁস বা মুরগির যে ডিমগুলো কিনছেন, বাচ্চা ফোটানোর পর তা বিক্রি হচ্ছে 50 থেকে 70 টাকায় । বিদ্যুৎ খরচ অতি সামান্য । সব মিলিয়ে লাভ কয়েকগুণ । মণীশের তৈরি ডিম ফোটানোর যন্ত্রের যেমন চাহিদা বাড়ছে, তেমনই হাঁস মুরগির বাচ্চারও চাহিদা রয়েছে । গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছে ওই যন্ত্র তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে কৃষি দপ্তরও ।