কলকাতা, 15 সেপ্টেম্বর:অন্য়ের সমস্য়া দেখে পাশ কাটিয়ে যাওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস ৷ কিন্তু, ব্যতিক্রমীও রয়েছেন অনেকে ৷ তেমনই একজন নদিয়ার মাজদিয়ার বাসিন্দা পাপিয়া কর ৷ বিবেকের টানেই অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো তাঁর অভ্যাস ৷ বিভিন্ন জায়গায় সাধ্য মতো ভিক্ষুক ও পথশিশুদের খাওয়া, পরার ব্যবস্থা করেন এই সমাজকর্মী ৷ হতদরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের বিনামূল্য়ে পড়ানও তিনি ৷ এবার পুজোয় (Durga Puja 2022) সেই পাপিয়া করকেই 'থিম' হিসাবে বেছে নিয়েছে উত্তর 24 পরগনার বাগুইআটির অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাব ! যার নাম দেওয়া হয়েছে, 'ভাগাড়ের মা' !
ক্লাবের পুজো কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের পুজোয় তুলে ধরা হবে পাপিয়ার লড়াইয়ের কাহিনি ৷ কেমন দেখতে হবে সেই মণ্ডপ ? সেখানে থাকবে আস্ত একটি রেল স্টেশন ! থাকবে এক প্লাটফর্ম থেকে অন্য প্লাটফর্মে যাওয়ার জন্য ফুট ওভার ব্রিজ ৷ এছাড়াও গড়ে তোলা হবে টিকিট কাউন্টার, চায়ের দোকান, বুক স্টল ৷ হঠাৎ দেখলে এই মণ্ডপকে সত্যিকারের রেল স্টেশন বলে ভুল হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয় !
আরও পড়ুন:মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সীসামুক্ত রং ব্যবহারে অনীহা কুমারটুলির
অশ্বিনীনগর বন্ধুমহল ক্লাবের পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ স্বরূপ নাগ বলেন, "আমরা প্রতি বছরই কোনও না কোনও ব্যক্তির মহান কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ জানিয়ে পুজোর থিম নির্বাচন করি ৷ এবারের পুজোর থিম পাপিয়া করকে নিয়ে করা হয়েছে ৷ তিনি একটা মহান কাজ করছেন ৷ দীর্ঘ 14 বছর ধরে নীরবে লড়াই করে চলেছেন তিনি ৷ সেই খবর আমি, আপনি অনেকেই রাখি না ৷ বছর দুই আগে লকডাউনে মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখন এই পাপিয়া করই রানাঘাট স্টেশনে খাবার বিলি করতেন ৷ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ৷ সেখান থেকেই আমরা পাপিয়ার কথা জানতে পারি ৷ তারপরই তাঁর কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয় ৷ প্রথমে তিনি রাজি না হলেও অনেক বোঝানোর আমাদের এই থিম করার অনুমতি দেন ৷ কিন্তু থিমের নামকরণ নিয়ে তিনি আপত্তি তুলেছিলেন ৷ কিন্তু, আমরা শুনিনি। আমরা তাঁকে বুঝিয়েছি যে তাঁর মতো অনেক ভাগাড়ের মা এই সমাজের আজ ভীষণ প্রয়োজন ৷"
নামকরণ নিয়ে উদ্যোক্তাদের বক্তব্য হল, দরিদ্র মানুষকে আজও সমাজের অন্য়ান্য শ্রেণি ব্রাত্য ও বাতিল মনে করে ৷ ঠিক যেভাবে অনভিপ্রেত জিনিসপত্র ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়, এই মানুষগুলোর সঙ্গেও বহু ক্ষেত্রে তেমন আচরণ করা হয় ৷ কিন্তু, পাপিয়া তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখেননি ৷ বরং মায়ের মতোই তাঁদের কাছে টেনে নিয়েছেন ৷ তাই তিনি যথার্থ অর্থেই 'ভাগাড়ের মা' !
আর এই বিষয়ে পাপিয়ার বক্তব্য হল, "প্রথম দিকে আমার খুব খারাপ লাগত ৷ যাঁদের কথা সমাজের সকল মানুষের ভাবা উচিত, তাঁদের কথা আদতে কেউই ভাবেন না ৷ এমনকী, আমি বা আমার মতো যাঁরা সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি, তাঁদের এই সমাজ আক্রমণ করতে ছাড়ে না ৷ কিন্তু, আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব ৷ এমন অনেক ভাগাড়ের মা এই সমাজে জন্ম নিক !"