পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

NRS-র জট কাটতে না কাটতেই হলদিয়ায় সুপারকে নিগ্রহ মৃতের পরিবারের

ফের রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা । হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে নিগ্রহের অভিযোগ রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে ।

CCTV

By

Published : Jun 19, 2019, 8:22 PM IST

Updated : Jun 19, 2019, 11:40 PM IST

হলদিয়া, 19 জুন : NRS-এর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা । এবারের ঘটনাস্থান হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল । চিকিৎসকের ভুলে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগে হাসপাতালের সুপারকে হেনস্থা । অভিযোগ, সুপারকে ধরে ধাক্কাধাক্কি করেন রোগীর পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা । পরে হলদিয়া থানায় খবর দেওয়া হয় । পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থানে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।

NRS ইশুতে বিক্ষোভকারী জুনিয়র ডাক্তার (ফাইল ছবি )

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন :NRS ইশুতে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ

পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানার অন্তর্গত দূর্বাবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি প্রামাণিক(30)-কে আজ দুপুর 1টা নাগাদ গোয়ালঘরে কাজ করার সময় বিষধর সাপ কামড়ায় । সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয় । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুপুর 1টা 30 মিনিট নাগাদ চিকিৎসা শুরু করে । প্রথমে তাঁকে অ্যান্টিভেনাম সিরাম দেওয়া হয় । বিকেল 4টে 30 নাগাদ তিনি মারা যান ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : নবান্নে যাব না, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব উড়িয়ে ঘোষণা জুনিয়র ডাক্তারদের

এরপরই মৃতের পরিবারের লোকেরা ভুল ইনজেকশনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা তৈরি হয় । রোগীর পরিজনদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হয় স্থানীয় বাসিন্দারাও । বিক্ষোভকারীদের দাবি, কর্তব্যরত চিকিৎসককে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে । এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এগিয়ে আসেন হাসপাতালের সুপার সুমনা দাশগুপ্ত ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : রুদ্ধদ্বার নয়, বৈঠক হোক সবার সামনে; মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন আন্দোলনকারীদের

তিনি রোগীর পরিবারের লোকেদের শান্ত করতে এগিয়ে আসেন । পরিজনদের বোঝানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসা নিয়ম অনুযায়ী রোগীকে সেলাইনের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সাথে অ্যান্টিভেনাম সিরাম দেওয়া হয়। অঞ্জলির অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার রোগীদের বোঝানো সত্ত্বেও কোনওভাবেই তাদের শান্ত করা যায়নি। বিক্ষোভকারীরা এমারজেন্সিতে গিয়ে টেবিলের উপর থাকা সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে দেয় এবং এমারজেন্সি দরজার কাচ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। সে সময়ই হাসপাতাল সুপার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি করা হয় তাঁকে। পরে হলদিয়া থানা থেকে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় । এবং মৃতের এক আত্মীয়কে আটক করে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : পরিবহকে দেখতে হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী

হাসপাতাল সুপার সুমনা দাশগুপ্ত বলেন, "যারা গন্ডগোল করছিল তাদের মধ্যে শুধু বাড়ির লোক ছিল সেটা নয় । বাইরের লোক ছিল । বাড়ির লোকের দু'ধরনের বক্তব্য ছিল । এক বিষধর সাপ ছিল না । রোগী সুস্থ হয়ে আসছিল । আপনারা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলেছেন । আমাদের সেই ডাক্তারকে চাই । আর একটা বক্তব্য ছিল বিষধর সাপ কামড়েছে । আপনারা যদি চিকিৎসাই না করতে পারলেন তাহলে অন্য কোথাও রেফার করে দিলেন না কেন?" HDO-র সামনে একটা জটলা তৈরি হয়েছিল । তখন পুলিশকে ডাকা হয়েছিল । পুলিশ এসে জটলা ফাঁকা করে দিয়েছিল । বিক্ষোভকারীদের বাইরে বের করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এমার্জেন্সির সামনে গন্ডগোল শুরু হয় ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : সাতদিনের অচলাবস্থার অবসান, আন্দোলন প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

বিক্ষোভকারীরা ভিতরে প্রবেশ করে টেবিল চাপড়ে চাপড়ে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে । টেবিলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলিকে ফেলে দেয় । জরুরি বিভাগের বাইরে কাচে বার বার ধাক্কা মারতে থাকে । সুমনা দাশগুপ্ত বলেন, "আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম । ঠেকানোর চেষ্টা করছিলাম । পাশ থেকে একজন এসে আমাকে ধাক্কা মারে । " NRS-এর রেশ কাটতে না কাটতেই আবার এই ঘটনা । কোথাও কি নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি রয়ে গেছে ? এর উত্তরে সুমনা বলেন, তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন । মানুষ অবুঝের মতো আচরণ করছে । তাদের বোঝানো যাচ্ছে না যে ডাক্তাররা সাধ্যমত চেষ্টা করছেন । তিনি আরও বলেন, "আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি । আমরা চাই এখানে পুলিশের স্থায়ী পোস্ট হোক । পুলিশ আরও সক্রিয় হোক । তবে ঘটনার CCTV ফুটেজ পাওয়া গেছে । কারা কারা গন্ডগোল করেছে সবার ছবিই উঠেছে । "

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : অচলাবস্থা কাটায় মুখ্যমন্ত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশংসা রাজ্যপালের

অন্যদিকে সুপার নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত রোগীর আত্মীয় শংকরী প্রামাণিক বলেন, "আমি কোনও ভাঙচুর করিনি । আমি ভিতরে ছিলাম । মারপিট বাইরে হচ্ছিল । আমাদের লোক ভেঙেছে, না কি অন্য লোক আমি কী করে বুঝব ।"

ভিডিয়োয় শুনুন সুপারের বক্তব্য

10 জুন NRS-এ রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় । রাজ্যজুড়ে জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভে সামিল হন । ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবিতে তাঁদের পাশে দাঁড়ান সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাউজ় স্টাফ ও নার্সরা । রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তৈরি হয় অচলাবস্থা । শেষ পর্যন্ত 17 জুন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আন্দোলনরত ডাক্তারদের দাবিদাওয়া মেনে নিলে আন্দোলন তুলে নেন তাঁরা । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ ফের এই ঘটনা ।

Last Updated : Jun 19, 2019, 11:40 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details