কলকাতা, 11 নভেম্বর: রীতিমতো আগুনে পথ। সেখানে পাওয়া যেত বারুদের গন্ধ। শালের জঙ্গল কিংবা পাহাড়ের বাঁকে দেখা যেত গেরিলা বাহিনীর আনাগোনা। এমন অশান্ত পরিবেশেই ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। পরে জঙ্গলমহলে দমন করা হয় মাওবাদীদের। অনেক পথ পার হয়ে শান্ত হয় দার্জিলিং। বিগত বছরগুলোতে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, পাহাড় হাসছে, জঙ্গলমহল হাসছে। কিন্তু প্রশাসনের অন্দরমহল জানে, এই হাসির অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আর তারপরেই নবান্নে শুরু হয় ভাবনা। কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর নির্ভরতা কমানো যায়। সূত্রের খবর, সেই নির্ভরতা কমানোর ভাবনা থেকেই পাহাড় এবং জঙ্গলমহলের জন্য অতিরিক্ত সশস্ত্র বাহিনী তৈরির সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন।
আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, পাহাড়ে নিরাপত্তায় তৈরি করা হবে গোর্খা ব্যাটেলিয়ন, জঙ্গলমহলের জন্য একটি ব্যাটেলিয়ান এবং কোচবিহারের জন্য নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন তৈরি করা হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার কর্মী নিয়োগ করা হবে। কীভাবে সেই নিয়োগ করা হবে তা স্থির করবেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
রাজ্যে পাহাড় এবং জঙ্গলমহল বরাবরই স্পর্শকাতর। সেটা সুভাষ ঘিসিংয়ের সময়ের আন্দোলন হোক বা বিমল গুরুংয়ের হাত ধরে তৈরি হওয়া আন্দোলন। পাহাড়ে তৈরি হওয়া সেইসব আন্দোলন কখনই শান্তিপূর্ণ থাকেনি। কখনও রক্ত ঝরেছে, কখনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি বাংলো। অশান্ত সেই আন্দোলন ঠেকাতে নানা সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়েছে রাজ্য। আর জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলন দমন করতে যৌথ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। যৌথ বাহিনীর কড়া নজরদারিতেই এখনও পর্যন্ত নতুন করে দানা বাঁধতে পারেনি বড়সড় মাওবাদী সংগঠন।
পাহাড়-জঙ্গলমহলে অতিরিক্ত ব্যাটেলিয়ন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা? - নারায়ণী ব্যাটেলিয়ান
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করেন পাহাড়ে নিরাপত্তায় তৈরি করা হবে গোর্খা ব্যাটেলিয়ন, জঙ্গলমহলের জন্য একটি ব্যাটেলিয়ান এবং কোচবিহারের জন্য নারায়ণী ব্যাটেলিয়ান তৈরি করা হবে।
যদিও তথ্য বলছে, আবার সংগঠন গুছিয়ে তুলছে মাওবাদীরা। যৌথবাহিনী-পুলিশের নাকের ডগাতেই তারা একটু একটু করে গড়ে তুলেছে গেরিলা সংগঠন। এবার উপস্থিতি জানান দেওয়ার পালা চলছে। গত 15 অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে ভুলাভেদা এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল। পুরানো স্মৃতি ফিরিয়ে বেলপাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ব্যবসায়ীর কাছে তোলা চেয়ে চিঠি এসেছে মাওবাদীদের। পুলিশের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ। এইসব ঘটনা রাজ্য প্রশাসনের স্নায়ুচাপ বাড়াচ্ছিল। এরই মাঝে সম্প্রতি বেলপাহাড়ি থানা এলাকার সীমান্ত লাগোয়া ওদলচুঁয়া গ্রামে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা মুখোমুখি হয় একটি মাওবাদী দলের। খড়্গপুর সদর শহরের ওই পর্যটক দলটি মাওবাদীদের মুখোমুখি হয় ডাঙ্কিকুসুম গ্রামে। দলে ছিল মোট সাতজন। প্রত্যেকেই ছিল সশস্ত্র। মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। দলে ছিল তিনজন মহিলা। অবশ্য তারা পর্যটকদের মারধর করেনি। শুধু কেড়ে নেয় মোবাইল ফোন। ঘটনার পরম্পরায় গত মাসেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে মাওবাদীরা। বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। যেখানে এক ঠিকাদারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে অবিলম্বে রাস্তার কাজ বন্ধ করতে হবে।
প্রশাসনের অন্দরমহল জানে যে কোনও মুহূর্তে আবার আগুন জ্বলতে পারে জঙ্গলমহলে কিংবা পাহাড়ে। তা সত্ত্বেও রাজ্যে অমিত শাহের সফরের মধ্যেই জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিহার নির্বাচনের জন্য আগেই আট কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি ছয় কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছত্তিশগড়ে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি নির্ভরতা না রেখে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইছে রাজ্য।