পুরুলিয়া, 10 সেপ্টেম্বর : সেতুর দেওয়ালে খোদাই একের পর এক মানুষের নাম ও তাঁদের মৃত্যুদিন । পুরুলিয়ার আড়ষা ও জয়পুর থানার সংযোগস্থলে অবস্থিত দেউলঘাটা সেতু । দূর থেকে এই সেতুর পিলারের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সেতুর দেওয়ালে আঁকা রয়েছে একাধিক ছবি । কিন্তু সামনে গেলেই ধরা পড়ে আসল ব্যাপার । ছবি নয়, সেতুর পিলার জুড়ে লেখা রয়েছে মৃত ব্যক্তিদের নাম ও তাঁদের মৃত্যুর তারিখ । কারও মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে মনে রাখার জন্য মৃতের আত্মীয়রা এই 'পঞ্জিকা সেতু'-র দেওয়ালে লিখে রাখেন মৃতের নাম ও তাঁর মৃত্যুদিন । হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই প্রথা মেনে আসছে পুরুলিয়ার বাসিন্দারা।
হাজারও মৃতের নাম ও তাদের মৃত্যুদিন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে 'পঞ্জিকা সেতু' - পঞ্জিকা সেতু
কংসাবতী নদীর উপর অবস্থিত 'পঞ্জিকা সেতু' । তার ঠিক নিচেই রয়েছে শ্মশান ঘাট । মৃত ব্যক্তিদের নাম ও তারিক সেতুর দেওয়ালের গায়ে পোড়া কাঠের আংরা, সিঁদুর অথবা গাছের পাতা বা পোড়া মাটি দিয়ে লেখা হয় । তবে এই ঘটনার সঠিক কোনও নিয়ম নেই ।
কংসাবতী নদীর উপর অবস্থিত এই 'পঞ্জিকা সেতু' । তার ঠিক নিচেই রয়েছে শ্মশান ঘাট । সামনেই রয়েছে প্রায় 1400 বছরের প্রাচীন পোড়া মাটির তৈরি বিখ্যাত দেউলঘাটা মন্দির । কথিত আছে, এইখানে দেহ সৎকার হলে স্বর্গপ্রাপ্তি হয় । আর এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেই হিন্দু-মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের দেহ সৎকার করা হয় দেউলঘাটা সেতুর নিচের শ্মশানঘাটে । তাদের নাম ও মৃত্যুর তারিখ সেতুর দেওয়ালের গায়ে পোড়া কাঠের আংরা, সিঁদুর অথবা গাছের পাতা বা পোড়া মাটি দিয়ে লেখা হয় । তবে এই ঘটনার সঠিক কোনও নিয়ম নেই ।
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ মাহাত ও হানিফ আনসারি জানান, এলাকার কারও মৃত্যু হলে এই দেউলঘাটা সেতুর নিচেই দেহ সৎকার করা হয় । আর তারপরই এই সেতুর দেওয়ালে মৃত ব্যক্তির নাম ও মৃত্যুর তারিখ লিখে দেওয়া হয় । এরপর বছর পেরোলে ওই ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয় এই স্থানেই । পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার কে কবে মারা গিয়েছিল, এই সেতুর দেওয়াল থেকেই তার একটি খতিয়ান পাওয়া যায় ।