প্রয়াত নুলিয়া সঞ্জয় শিটের স্ত্রী এবার সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিঘা, 9 মে: উন্নয়নের আলোর নীচে অন্ধকার ৷ সমুদ্রে পর্যটককে বাঁচাতে গিয়ে কয়েকবছর আগে প্রাণ হারিয়েছিলেন সিভিল ডিফেন্সের নুলিয়া ৷ তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে আর্থিক সাহায্য ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা হয়নি ৷ এমনকী মেলে না বিধবা ভাতাও ৷ তাই অভাবে প্রায় অনাহারেই দিন কাটে পরিবারের ৷ একের পর এক প্রশাসনিক দফতরে ঘুরলেও প্রয়াত নুলিয়ার স্ত্রীর কথায় কান দেননি কর্তারা ৷ তাই এবার সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্ত্রী ৷ ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘার ৷
জানা গিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে সমুদ্র সৈকত ওল্ড দিঘার জগন্নাথ ঘাটে এক পর্যটককে উদ্ধার করতে গিয়ে চোট পান দীঘা থানার সিভিল ডিফেন্সের (নুলিয়া) কর্মী সঞ্জয় শিট (37) ৷ সে সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে পাথরের ধাক্কায় বুকে চোট পেয়েছিলেন তিনি ৷ সেই আঘাত থেকে তাঁর ক্ষতস্থলে ক্যানসার হয় ৷ তাঁর চিকিৎসা শুরু হলেও অভাবের কারণে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি ৷ 2021 সালের 4 মার্চ মৃত্যু হয় নুলিয়া সঞ্জয়ের ৷ তাঁর পরিবারে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা রয়েছেন ৷
স্বভাবতই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সঞ্জয়ের মৃত্যুতে সংসারে অভাব নেমে আসে ৷ এখন স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে, তাঁর মা প্রায় অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ৷ সিভিল ডিফেন্সের নুলিয়ার মৃত্যুর পর স্ত্রী মানসীকে চাকরি-সহ 3 লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্ত্রী কিছুই পাননি ৷ এমনকী বিধবা ভাতাটুকুও জোটেনি বলে জানা গিয়েছে ৷ দিনের পর দিন প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দরবার করে চলেছেন প্রয়াত সঞ্জয়ের মানসী ৷ প্রতিশ্রুতি মিললেও কাজের কাজ হয়নি ৷
সোমবার কাঁথির মহকুমাশাসকের দফতরের গেটের সামনে সকাল থেকে অবস্থানে বসেছিলেন মানসী, তার শিশু কন্যা ও মৃত সঞ্জয়ের মা ৷ ইটিভি ভারতের সাংবাদিককে দেখে তিনি আকুতি জানান, বহুদিন ধরে বহু দফতরের আধিকারিকদের কাছে গিয়েছেন তিনি ৷ সবাই তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে খালি হাতে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷ তিনি এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরির কাছেও গিয়েছেন ৷ তিনিও সুরাহার আশ্বাস দেন ৷ শেষে কাঁথির মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ মানসী ৷ তিনি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "কোনও কাজ যদি না পাই, তাহলে বাধ্য হয়ে আমি আমার দু'টো বাচ্চাকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেব ৷ কোনও সাড়া মেলেনি ৷ শুধু প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি ৷"
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, কোনও নুলিয়া পর্যটককে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারালে তাঁর পরিবারের কাউকে নুলিয়ার কাজ দেওয়া হবে ৷ দু'বছর কেটে গেলেও মানসী নুলিয়ার কাজ পাননি ৷ নুলিয়ার কাজটি তিনি যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন বলে দাবি করেছেন ৷ সিভিল ডিফেন্স কর্মী সঞ্জয়ের স্ত্রী ভালো সাঁতারও জানেন ৷ তাই মহিলা পর্যটকদের রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবেন। মানসীর অভিযোগ, সব জেনেশুনেও প্রশাসন কিছু করছে না ৷
মৃত নুলিয়া সঞ্জয়ের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা থানা এলাকার বিল-আমড়িয়া গ্রামে ৷ দিঘাতে এখন প্রায় 35 জন নুলিয়ার কাজ করেন ৷ তাঁদের মধ্যে 8 জন মহিলা ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সমুদ্রতট সুরক্ষিত রাখার কাজ করেন ৷ দিঘা ছাড়া মন্দারমণি, তাজপুর-সহ শংকরপুর পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা নেয় নুলিয়ারা ৷ তাঁদের পরিবারের সরকার সদয় হোক, সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সব নুলিয়ারা ৷ এ প্রসঙ্গে উপ-মহাকুমাশাসক জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যে নয় ৷ এটি পুলিশ প্রশাসনের আওতাভুক্ত ৷ তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷
আরও পড়ুন: বিচে ঘোরা, মদ্যপানের পর গলায় ফাঁস ! দিঘায় পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আটক সঙ্গিনী