কলকাতা ও হলদিয়া, 28 এপ্রিল : নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ কাকা ও জেঠুর বিরুদ্ধে । ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের । মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে ওই নাবালিকার । জানা গেছে, AIDS-এ আক্রান্ত ছিল সে । ঘটনায় কাকা ও জেঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি । কারণ রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে তাদের HIV নেগেটিভ এসেছে । গতকাল একথা জানান হলদিয়া মহিলা থানার OC মৌসুমি সরদার । তিনি বলেন, "আমরা রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতে পারি দু'জনেরই রিপোর্ট HIV নেগেটিভ । অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার কারণেই তাদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি ।" পুলিশ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, পারিবারিক সম্পত্তিগত বিবাদ অথবা কোনও শত্রুতার কারণেও মৃতের বাবা এই অভিযোগ করে থাকতে পারেন । সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে ।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাবালিকা বারবার বলেছিল, কাকা, জেঠু আর ঠাকুমা আমাকে বাঁচতে দিল না । তলপেটে যখন অসহ্য যন্ত্রণা, বাবা মা-র কাছে একদম শেষে সে জানায় তার উপর হওয়া পাশবিক অত্যাচারের কথা । HIV পজ়িটিভও আসে তার ব্লাড রিপোর্টে । পেশায় গাড়ি চালক বাবা HIV, AIDS সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানতেন না । হাসপাতালের তরফ থেকেই তাঁকে সেসব বোঝানো হয় । কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ । মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই নাবালিকা । প্রথমে তমলুক, পরে NRS ও তারপর কলকাতা মেডিকেল কলেজ । চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টাও বাঁচানো যায়নি তাকে । তার বাবা নিজের ভাই, দাদা ও মায়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মেলেনি ধর্ষণের প্রমাণ । তাদের রক্তে মেলেনি HIV ভাইরাসও ।
১৬ এপ্রিল থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল । সেখানকার মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, মৃতা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল । সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়েছিল । তার বাবা জানান, হঠাৎ ঠান্ডা লেগে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তাঁর ১০ বছরের মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে । পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাসিন্দা তারা । অসুস্থ অবস্থায় মেয়েকে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যান । সেখানে রক্ত পরীক্ষায় তার শরীরে HIV পজ়িটিভ-এর খোঁজ মেলে । তারপর তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে একাধিকবার ধর্ষিতা হয়েছে এবং HIV পজ়িটিভ রয়েছে । তাঁর মেয়েও পরে জানায়, কাকা এবং জেঠু ধর্ষণের জন্য দায়ি । তারপর পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে । সেখান থেকেই তিনি জানতে পারেন, মিষ্টি খাওয়ার পর তার জ্ঞান থাকত না । অভিযোগে তার বাবাও জানান, তিনি অনেকবার দেখেছেন মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর দাদা বাড়িতে ছেড়ে যাচ্ছেন ।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারিতে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হয় ওই নাবালিকা । ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফেরে । এরপর ফের ১৩ এপ্রিল অসুস্থ হওয়ায় তমলুক হাসপাতালে ভরতি করা হয় । সেখানে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে NRS মেডিকেল কলেজে স্থানাস্তরিত করা হয় । সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । ১৬ এপ্রিল থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল সে । ১৯ এপ্রিল পুরো বিষয়টি জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তার বাবা । তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাঁর মেয়ের শারীরিক অবস্থা খুবই জটিল । যখন তখন চরম কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । এই অবস্থায়, দোষীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তির চাই । মঙ্গলবার সেখানেই তার মৃত্যু হয় । অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে । প্রমাণ না মেলায় আপাতত গ্রেপ্তার করা হয়নি অভিযুক্তদের ।