পাঁশকুড়া, 3 মার্চ : খুন করে ট্রলি ব্যাগে দেহ ভরে প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে ট্রেনে করে পাচারের ঘটনায় পাঁশকুড়া GRP থানার পুলিশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল । পুলিশ জানিয়েছে ধৃতের নাম তৌহিজউদ্দিন শেখ ওরফে রাজু হালদার । রাজু দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুর এলাকার বাসিন্দা । কাঁথির রামনগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে দিঘা এলাকার হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল সে । ধৃতকে আজ তমলুক জেলা আদালতে তোলা হবে । 24 ফেব্রুয়ারি হোটেল লিজ় নেওয়ার জন্য বকেয়া 6 লাখ টাকা দিঘাতে পৌঁছে দিতে গিয়েই এজেন্টের হাতে খুন হতে হয়েছিল কলকাতার বউবাজারের বাসিন্দা মৃত হাসান আলিকে (52) । জেরার মুখে অভিযুক্ত খুনের কথা স্বীকার করেছে দাবি পুলিশের ।
পাঁশকুড়া খুনের ঘটনায় ধৃত 1
পাঁশকুড়ায় খুন করে দেহ লোপাটের ঘটনায় মুল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার ৷ বাকি 2 জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ৷ মৃত ব্যক্তি কলকাতার বউবাজারের বাসিন্দা ৷ ধৃতের বিরুদ্ধে খুন, খুনের ষড়যন্ত্র, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসের 24 তারিখ সকালে কলকাতার বউবাজারের বাড়ি থেকে 6 লাখ টাকা নিয়ে দিঘার রওনা দেন ব্যবসায়ী হাসান আলি । বাসে যাওয়ার পথে ফোনে যোগাযোগ হয় হোটেলের এজেন্ট রাজুর সঙ্গে । তার কথাতেই হাসান বাবু সেদিন দুপুর নাগাদ রামনগর বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমে পড়েন । এরপরই রাজু ও তার দুই বন্ধু গৌতম ও নোনি হাসান বাবুকে নিয়ে রাজুর রামনগরের সিনেমা মোড় এলাকার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ওঠেন । সেখানেই টাকা হাতাতে পরিকল্পনা করে প্রথমে গলায় ফাঁস দিয়ে হাসানকে খুন করে তারা । পরে মৃতের পরিচয় যাতে কোনভাবেই প্রকাশ্যে না আসে তার জন্য মুখে ভারী পাথর দিয়ে আঘাত করে থেতলে দেওয়া হয় মুখ । দেহ লোপাটের উদ্দেশ্যে হাসানবাবুর দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে ৷ এরপর 25 ফেব্রুয়ারি ভোর 5.48 নাগাদ রামনগর স্টেশনে পাঁশকুড়া গামী দীঘা লোকালে ট্রলি ব্যাগটি তুলে দেয় রাজু ও তার দুই বন্ধু । গোটা ঘটনাই ট্রেনে থাকা CCTV তে বন্দি হয় । পরে সেই ট্রেন একাধিক রুট বদল করে রাত্রি 10.50 নাগাদ মেচেদা স্টেশনে এসে পৌঁছালে রেল পুলিশ ট্রলি ব্যাগে ভরা দেহটি দেখতে পান । যদিও এক্ষেত্রে ট্রেনে থাকা CCTV ফুটেজ অভিযুক্ত রাজুকে চিহ্নিত করে সহজে গ্রেপ্তার করতে তুরুপের তাস হয়ে দাঁড়ায় পুলিশের কাছে । এরপর গতকাল বিকেলে রাজুর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্রাক করে পুলিশ জানতে পারে সে ডায়মন্ড হারবার থেকে ভেসেলে করে কুকড়াহাটি আসছে । সেইমতো সাদা পোশাকে উপস্থিত হয় পুলিশের আধিকারিকরা । সেখান থেকে বাসে করে রামনগর যাওয়ার পথেই মারিশদা থেকে তাকে আটক করা হয় । পরে পাঁশকুড়া GRP থানায় এনে টানা জেরা করা হলে জেরার মুখে অভিযুক্ত স্বীকার করে নেয় খুনের ঘটনার কথা । পুলিশ জানিয়েছে রাজুর কথায় একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে । যে কারণে পুলিশ মৃত হাসানের স্ত্রী সারিকা খাতুনকেও সন্দেহের তালিকার মধ্যে রেখেছে, তাকেও ভবিষ্যতে জেরা করা হতে পারে । ধৃত রাজুর বিরুদ্ধে খুন, খুনের ষড়যন্ত্র, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।
এ বিষয়ে পাঁশকুড়া GRP থানার OC অসীম পাত্র জানিয়েছেন, ধৃত তৌহিজ উদ্দিন সেখ ওরফে রাজুকে আজ তমলুক জেলা আদালতে তোলা হবে । তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তকে নিজেদের হেপাজতে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে 14 দিনের আবেদন জানানো হয়েছে। বাকি দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। কলকাতার ব্যবসায়ী হাসান আলীর কাছে থাকা 6 লাখ টাকা হাতাতেই এই খুন বলে অনুমান করা হচ্ছে । ঘটনার সাথে পারিবারিক কোনো যোগ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।