দিঘা, 23 মে: আমফানের দাপটে শ্মশান হয়ে গিয়েছে দিঘার ঝাউবন। শুধু ঝাউয়ের মৃত্যু তো নয়, বরং চিরকালীন বাঙালি রোমান্টিকতারও মৃত্যু। কম খরচে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির প্রিয় সৈকতের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে সমুদ্র সৈকতের পুরোটাই। সবচেয়ে বড় কথা, দিঘার যে সিগনেচার ঝাউবন, সেই বিষয়টিই পড়ে গিয়েছে অস্তিত্বের সংকটে। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সহ উপকূলবর্তী এলাকার লক্ষাধিক ঝাউগাছ সাইক্লোনে ভেঙে পড়েছে বলে জানাচ্ছে বন দপ্তরও। স্বভাবতই এই ঘটনায় মন ভালো নেই দিঘার পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেরই। বন দপ্তরের তরফে নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অবশ্য। কিন্তু, সেই গাছ কবে বড় হয়ে পরিপূর্ণ ঝাউবন হয়ে উঠবে, কবে ফিরবে দিঘার যৌবন? এই প্রশ্ন কঠিন এবং উত্তরও আপাতত কারো জানা নেই।
বনদপ্তর এবং স্থানীয়দের বক্তব্য, ইতিমধ্যে একাংশের মানুষের অতিরিক্ত চাহিদায়, তথা আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিঘার সৌন্দর্য্যহানি হয়েছিল। এর উপর ভাঙনের ফলে দিঘা হারিয়েছে একাধিক বালিয়াড়ি ও ঝাউবন। তবুও কংক্রিটের জঙ্গলের বিপরীতে মাথা উঁচু করে লড়াই দিচ্ছিল কয়েক লাখ ঝাউগাছ। সমুদ্র এবং তারাই দিঘার অস্তিত্ব হয় উঠেছিল। কিন্তু, দানব আমফানের দাপটে সেই অস্তিত্বই এখন সংকটে। লাখ লাখ ঝাউয়ের লাশ যেন সুন্দরী দিঘাকে রাতরাতি শ্মশানে ভূমিতে পরিণত করেছে!
লকডাউনের পর থেকেই সরকারি বিধি নিষেধে দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য দিঘা। আশা করা গিয়েছিল, কোরোনার প্রকোপ কাটলেই ফের প্রিয় ঝাউ ঘেরা সমুদ্র সৈকতের টানে পর্যটক আসবে, জম উঠবে পর্যটন ব্যবসাও। কিন্তু, তার আগেই আমফানের দাপট দিঘা নিজেই যেন নিজেকে হারাল! শুধু কী দিঘা? এইসঙ্গে শংকরপুর, তাজপুর, জুনপুট, মন্দারমণি থেকে হলদিয়া অবধি মারণ ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত সমুদ্র তীরবর্তী সবুজ। সমুদ্র উপকূলবর্তী 400 হেক্টর জমির ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। পাশাপাশি হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, জেলিংহাম সহ সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন বহু ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত। বন আধিকারিকদের কথায়, শিল্প শহর হলদিয়া সহ জেলাজুড়ে যেভাবে সবুজ ধ্বংস হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে প্রকৃতিক ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা হবে তা রীতিমতো এক চিন্তার বিষয়। নতুন চারাগাছ দ্রুত লাগালেও বড় হতে সময় লাগবে। হতাশ বন দপ্তর আধিকারিকদের বক্তব্য, কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছ হয়তো চিরকালের মতো হারিয়ে গেল! নতুন প্রজন্ম যে বৈচিত্রের কথা কোনওদিন জানতে পারবে না! এইসঙ্গে এমন বিপুল পরিমাণ গাছ ধ্বংস হওয়ায় শিল্প শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চিন্তায় প্রশাসন।