গুসকরা, 28 ডিসেম্বর: কলেজের এক ছাত্রী হঠাৎ হোয়াটস অ্যাপে একটা ম্যাসেজ পান । তাতে তিনি দেখেন, কলেজের প্যাডে লেখা একটা নোটিশ । সেখানে প্রিন্সিপাল তাঁকে জানাচ্ছেন, এক ছাত্র তাঁর প্রেমে পড়েছে । তাই তাঁকে সদুত্তর দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে ছাত্রীকে ৷ না-হলে ছাত্রের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে । নোটিশের শেষে প্রিন্সিপালের সই ও কলেজের স্ট্যাম্প দেওয়া আছে ৷
এই ধরনের একটি নোটিশ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় ক্যাম্পাসে। পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের ঘটনা । বিষয়টি জানাজানি হতেই কলেজ কর্তৃপক্ষ বুধবার দুই ছাত্রী ও প্রাক্তন এক ছাত্রকে ডেকে পাঠায় । কলেজ কর্তৃপক্ষের জেরার মুখে ওই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়ে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান । কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে । এই ঘটনা কলেজের কেউ জানত না । প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে আপাতত ওই সব ছাত্রছাত্রীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হবে ।
গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের প্যাডে প্রিন্সিপালের সই নকল করে যে বিজ্ঞপ্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাতে লেখা আছে, "গুসকরা মহাবিদ্যালয়ে পাঠরত পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্রী..... কে জানানো যাচ্ছে যে, বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের মহাবিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক কথায় বলতে গেলে আপনার প্রেমে পড়েছে । কিন্তু আপনি কোনও সদুত্তর দিচ্ছেন না । যার ফলে তিনি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না । আপনার কাছে একান্ত অনুরোধ, আপনি কিছু একটা করুন যাতে আমাদের ছাত্রের ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা না হয় এবং ঠিক করে পড়াশোনা করতে পারে ।"
যে ছাত্র কলেজের প্যাডে প্রিন্সিপালের সই নকল করে এই কাজ করেছে তাঁর বক্তব্য, "দিন কয়েক আগে আমি কলেজের প্যাড ও প্রিন্সিপালের সই নকল করে একটা নোটিশ লিখি । মজার ছলে লেখাটা লিখে একজনকে পাঠাই । এমনভাবে লিখেছিলাম যেন মনে হচ্ছে প্রিন্সিপাল কোনও একজন মেয়েকে আমার হয়ে কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন । এর জন্য কলেজের মানহানি হয় । জীবনে একটা জঘন্যতম ভুল করেছি । আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী । আমি যে মেয়েটাকে পাঠিয়েছিলাম সে এটা সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় । এদিন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিই ।"
যে ছাত্রীকে ওই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল তিনি বলেন, "একটা ঘটনার কারণ জানাতে আজ আমাকে কলেজে ডেকে পাঠানো হয় । কলেজের প্যাডে আমাকে একজন প্রেমপত্র দিয়েছিল । সেটা ভাইরাল হয়ে যায় । আমি বুঝতে না পারায় এই ঘটনা ঘটে। একটা ছেলে এটা আমাকে পাঠায় । আমি মজার ছলে এটা হোয়াটস অ্যাপে স্ট্যাটাস দিয়ে দিই । দু-এক মিনিটের মধ্যে সেটা মুছেও দিই । কিন্তু কে বা কারা সেটা ডাউনলোড করে ভাইরাল করে দেয়। কলেজের কেউ জড়িত নয় । যে ছেলেটা আমাকে পাঠিয়েছে সে এডিট করেই আমাকে পাঠিয়েছে । ছেলেটাকে সেভাবে চিনতাম না । এর আগে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল । আমি রাজি হইনি । এরপর সে আমার নম্বর জোগাড় করে হোয়াটস অ্যাপে পাঠায় । আমি মজার ছলে সেটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিই । বুঝতে পারিনি এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে । আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি ।"
এই বিষয়ে গুসকরা কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বুধবার সোশাল মিডিয়ায় একটা রিপোর্ট ভাইরাল হয় । প্রিন্সিপালের সই এবং কলেজের প্যাড নকল করে একটা নোটিশ মজার ছলে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয় । বিষয়টি জানার পরেই কলেজের যে সব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটি, ডিসিপ্লিন কমিটি সকলেই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে । আমরা বেশ কয়েকজনের নাম জানতে পারি । ওই সমস্ত ছেলেমেয়েদের ডেকে পাঠানো হয় । তাঁরা কমিটির সামনে ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় মজার ছলে বুঝতে না পেরে এ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে । তারা ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে । কলেজের অজ্ঞাতসারেই এই ঘটনা ঘটেছে । কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তও নয় । তারা বিষয়টি জানেও না । সেই জন্য পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে । আপাতত ওই সব ছাত্রছাত্রীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে ।"
আরও পড়ুন :