পূর্ব বর্ধমান, 11 ডিসম্বর: শীতের দিনে গরম চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা । এমনিতেই শীতকালীন চায়ে থাকে উষ্ণতার ছোঁয়া। কিন্তু সেই চা যদি হয় কাঁচা লঙ্কার তাহলে ! অবাক হওয়ার কিছু নেই, বর্ধমান শহরে কাঁচা লঙ্কার চা খেতে ভিড় করছেন মানুষজন । আর এই ফেমাস লঙ্কা চাকে ঘিরেই জমে উঠেছে বর্ধমান শহরের আড্ডা ৷
বর্ধমান শহরের টাউনহলের উলটো দিকে মিউনিসিপ্যাল বয়েজ় হাইস্কুল । স্কুল লাগোয়া সরু গলি দিয়ে ঢুকতে প্রথমেই ডানদিকে পড়বে সাহা টি কর্নার । এই সাহা টি কর্নারের বিশেষত্বই হল স্পেশাল লঙ্কা চা ৷ বেলা বারোটার পর থেকে রাত বারোটার আগে যেতে হবে সেখানে । সারা বছরই চায়ের স্বাদ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন দোকানের মালিক গোবিন্দ সাহা । চায়ের স্বাদ নিতে পথচলতি মানুষ থেকে অফিসের কর্মী সকলেই ছুটে যান সেই দোকানে। আর দামও সাধ্য়ের মধ্য়ে, এক কাপ চা মাত্র পাঁচ টাকা ।
শীতের আমেজে বর্ধমানবাসী মজেছে কাঁচা লঙ্কার চায়ে পুজোর আগে থেকেই গোবিন্দ সাহা ভাবতে শুরু করেন কিভাবে ওই পাঁচ টাকাতেই স্পেশাল চা মানুষকে দেওয়া যায় । সেইমতো নিত্য নতুন মশলা দিয়ে শুরু করেন পরীক্ষা নিরীক্ষা। যা শুনে স্ত্রী ও পরিজনদের থেকে নানান কথাও শুনতে হয়েছিল গোবিন্দ সাহাকে । এইভাবে দিনের পর দিন পরীক্ষা করতে গিয়ে কাঁচা লঙ্কা ও আদার সঙ্গে বারো রকমের মশলা দিয়ে তৈরি করে ফেলেন কাঁচা লঙ্কার চা। এরপর যখন কোনও খরিদ্দার তাঁর দোকানে আসতেন, তাঁকেই তিনি লঙ্কা চা খাওয়ার প্রস্তাব দিতেন । এটাও বলে দিতেন যদি ঝাল লঙ্কার চা ভালো না লাগে, তাহলে কোনও পয়সা নেওয়া হবে না । উলটে তাঁকে দুধ চা পরিবেশন করা হবে । কিন্তু কাঁচা লঙ্কার চা সবারই পছন্দ হয়ে যাওয়ায়, খরিদ্দাররা অন্য চায়ের খোঁজ করা বন্ধ করে দিয়েছেন । পাশেই আছে একটা বীমা সংস্থার অফিস । ওই অফিসে কর্মীদের একাংশ অপেক্ষা করে থাকেন গোবিন্দ সাহার লঙ্কা চা খাওয়ার করার জন্য় । অফিসে এমনও কয়েকজন আছেন, যাঁরা চা বিশেষ পছন্দ করেন না। তাঁরাও মজেছেন স্পেশাল চায়ের চুমুকে । আরও পড়ুন : সল্টলেকে বহুতল থেকে উদ্ধার পচাগলা দেহ, সন্দেহ মা-ভাইকে, গ্রেপ্তার দুই
কুণাল বসু নামে এক খরিদ্দার এসেছিলেন চায়ের দোকানে । তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে এখানে চা খেতে আসি । একদিন গোবিন্দ দা বলেন, স্পেশাল চা খেয়ে দেখো । ভালো না লাগলে পয়সা দিতে হবে না । চা খেয়ে দেখলাম ঝাল মশলা দেওয়া স্পেশাল চা । কাঁচা লঙ্কার একটা হালকা গন্ধও আছে চায়ে । চা খেয়ে খুব ভালো লেগেছে।’’ বীমা সংস্থার আধিকারিক অঙ্কিতা লাই বলেন, ‘‘দারুণ স্বাদ । লঙ্কা চায়ের পাশে কোনও চা হয় না । অফিসে এলেই লঙ্কা চায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি । লঙ্কা চা খেয়েই আমরা কাজে ছন্দ খুঁজে পাই । প্রথম এই চা খেয়ে অদ্ভুত স্বাদ পেয়েছিলাম । শুনেছি প্রায় 12 রকমের মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ।’’
আরও পড়ুন : ছটপুজো বন্ধ করেও হাল ফেরেনি রবীন্দ্র সরোবর লেকের
হঠাৎ এই ধরনের স্পেশাল চায়ের চিন্তাভাবনা কেন ? এ প্রসঙ্গে বিক্রেতা গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘‘এমনিতেই আমি চায়ের নতুন স্বাদ আনতে দিনরাত চিন্তা ভাবনা করি । মানুষ কেন আমার চা খাবে? সেই কথা মাথায় রেখেই চায়ে নতুন স্বাদ আনার জন্য পুজোর সময় থেকেই বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করছিলাম । এটা করতে গিয়ে অনেক রকম মশলা কিনতে টাকা খরচ করেছি । কিন্তু কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারছিলাম না। আমি তবুও দমে যাইনি । চা-টা মূলত কাঁচা লঙ্কা ও আদা দিয়ে করা হলেও চায়ের কাপে থাকছে কয়েক রকমের মশলা ৷ একটা কমবেশি হলেই সেই চা আর ভালো লাগবে না৷ স্পেশাল চায়ের জন্য দাম সেই পাঁচ টাকাই রেখেছি। কিন্তু দেখলাম এই চা একবার খাওয়ার পরে মানুষজন বারবার আসছে । এখন তাঁদের শীতের মরশুমে লঙ্কা চা ছাড়া চলেই না।’’